১৮৮১ সালে নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’। ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবর সেখানে চতুর্থ সম্মেলনে গৃহীত হয় এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, বলা হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে সব শ্রমজীবী মানুষ আট ঘণ্টার বেশি কোনওভাবেই কাজ করবে না। ওই দিনটিতে তাই পাঁচ লক্ষ শ্রমিক প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ বিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে ভয়ে পিছিয়ে যায়।


৩ মে ম্যাককর্মিক হার্ভাস্টার কারখানায় নির্মম পুলিশি আক্রমণ চলে, তাতে প্রাণ হারান ৬ জন নিরীহ শ্রমিক। সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর পরের দিন অর্থাৎ ৪মে হে মার্কেট স্কোয়্যারে আয়োজিত হয় এক বিশাল প্রতিবাদ সভা। পুলিশ এই সভায় গুলি চালালে শহিদের রক্তে রাঙা হয় হাতের পতাকা। গ্রেফতার করা হয় চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে শুরু হয় প্রহসন, জারি করা হয় ফাঁসির আদেশ।


দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছয় দুনিয়ার সব মেহনতি শ্রমজীবি মানুষের কানে। ১৮৮৯ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয় যে ১৮৯০ সালে ১ মে থেকে প্রতি বছর শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন হিসেবে এই দিনটি পালিত হবে। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক মে দিবসে পরিণত হল।


আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের লড়াই সবচেয়ে কঠিন। এই লড়াই জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই। এই আর্থিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমজীবী মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে করোনা পরবর্তী সময়ে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। তাদের জীবনে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর কালো দিন।


করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় বিগত বছরগুলিতে কাজ হারিয়ে দলে দলে গাঁয়ের মাটিতে ফিরে এসেছে বহু শ্রমিক। তাদের সেই অসহায় ছবি প্রতিনিয়ত ভেসে উঠেছিল সংবাদ মাধ্যমের পর্দায়। অনেকে আবার ফিরতে না পেরে আটকে ছিল বিভিন্ন রাজ্যে। কোনও রকমে সামান্য সাহায্যে তাদের মুখে জুটছিলো আহার, সেটাও অনিশ্চিত, কারোর কারোর হয়তো সেটাও জুটেনি নিয়মিত।


একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে। আসবে আবার নতুন সকাল, কিন্তু এই শ্রমিকদের জীবনে যে আঁধার নেমে এসেছে সেটা তারা কাটিয়ে উঠবে কীভাবে! তাঁদের জীবন থেকে যদি কলকারখানা, হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ চলে যায়, তাহলে মে দিবস পালনের ওই মুষ্টিবদ্ধ হাত আর কখনও উপরে উঠবে না।


আসুন, আমরা সকলেই আজ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে, কৃষক, শ্রমিক, দুনিয়ার মজদুর সকলের পাশে এসে দাঁড়াই। তবেই এই মেহনতী মানুষের দল আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। সমাজ দাঁড়াতে পারবে। আমরা পালন করতে পারব মে দিবস। মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে উঠবে। শ্রমদিবসের লড়াইও সার্থক হবে। দুনিয়ার মজদুর এক হবে। সফল হবে মেহনতী মানুষের সংগ্রাম।


মে দিবসে রক্তে লেখা কবিতা
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মাঠে মাঠে আজি সবুজ ফসলে
শুনি মে দিবসের গান,
কল-কারখানায় মেশিনের চাকা
হইয়াছে আজি চলমান।


বুলেট বিদ্ধ শ্রমিকের রক্তে
রাঙানো রক্তিম নিশান,
মে দিবসের অরুণ প্রভাতে
দিতে হবে শ্রদ্ধা সম্মান।


কৃষক ও শ্রমিক অন্ন পায় না
দিন রাত ঝরায় ঘাম,
সারাদিন যারা হাতুড়ি চালায়
কে দেবে কান্নার দাম?


ক্ষুধার অন্ন কেড়ে খায় যারা
কেড়ে খায় ক্ষুধার রুটি,
কবিতার পাতায় বিদ্রোহ আজিকে
কবিতারা মাগিছে ছুটি।


মে দিবসে কান পেতে শুনি
কৃষক শ্রমিকের কোলাহল,
আধ পেটা খেয়ে হাতুড়ি চালায়
দুইচোখ বেয়ে আসে জল।


লালে লাল হয়ে উঠিছে অরুণ
কৃষক শ্রমিকদের খুনে,
ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদে সর্বহারা
হেথা মৃত্যুর জাল বুনে।


আমার পূর্ব প্রকাশিত আরও একটি মে দিবসের কবিতা


মহান মে দিবসের কবিতা
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


মহান মে দিবসে আজিকে জেগে ওঠো কৃষক দল,
কারখানায় দেখিতে যে পাই শ্রমিকের চোখে জল।
যারা মাঠে মাঠে ফসল কাটে শানিত কাস্তে দিয়ে,
লোহার ফলকে হাতু়ড়ি চালায় শ্রমিক হাতুড়ি নিয়ে।


জাগো রে কৃষক জাগো রে শ্রমিক জাগো রে সর্বহারা,
দিনরাত ওরা কাজ করে ওদের শ্রম কেড়ে খায় যারা।
তারাই ধনিক, তারাই বণিক, মালিকের দল ওরা হাসে,
টাকা দিয়ে ওরা শ্রম কিনে নেয় দাঁড়ায় না ওদের পাশে।


শ্রমিক তুমি এগিয়ে এবার সজোরে হাতুড়ি হাতে ধর,
কৃষক তুমি কাস্তে হাতে নিয়ে বিদ্রোহ আজিকে কর।
মাঠে মাঠে আজ সবুজ ফসলে দেখি সবুজের বিপ্লব,
কল কারখানায় ঘুরিছে যে চাকা শুনি তার কলরব।


মে দিবসে কান পেতে শুনি কৃষক-শ্রমিকের কোলাহল,
জাগো রে শ্রমিক জাগো রে কৃষক জাগো সর্বহারার দল।
বিদ্রোহী আমি নীরব কবি, তাই কাঁদে প্রাণ ওদের দুঃখে,
রক্তিম পতাকা উড়ুক এবার, এই বিশাল ধরণীর বুকে।


আবৃত্তি করেছেন:
শতাব্দী রায়চৌধুরী, তাজরিন সুলতানা, জয়শ্রী মাজি, প্রিয়ঞ্জনা মুখার্জী, সুদীক্ষা, অর্চনা মণ্ডল, তৃষাগ্নি মণ্ডল , অঙ্কুরিত সিনহা, মলয় নিয়োগী ও আরো অনেকে।
________________________________________
________________________________________
• ডা. প্রদীপ কুমার রায়(সুশোভন কবি)
সঠিক দিনে সঠিক উপহার
কি যে বলি প্রিয় কবি!
দারুণ সুন্দর কবিতায়
আজ শুধু মুগ্ধতার ছবি।
কবিতার শেষ লাইনে যে আহবান রেখেছেন তা আমাদের সবার কাম্য।
অনেক ভালো লাগা রেখে গেলাম কবির পাতায়। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন প্রিয় কবি।


• অ জানা
খুব ভালো লাগল প্রিয়কবি।


• অজিত কুমার কর
সুন্দর পরিবেশন। শুভেচ্ছা রইলো।


• পারমিতা ব্যানার্জি
• খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা অবিরত ।


• গোপাল চন্দ্র সরকার
• দুঃখী অসহায় শ্রমিকের জীবন নিয়ে সততার ভাবনার পরাকাষ্ঠা, সশক্ত কাব্য ।
"সাম্যবাদ, এনে দেয় যদিও অস্ত্র
চাপে শ্রমিক আজ শঙ্কায় ত্রস্ত !
চাই বিপ্লবে- পুনঃ নিক সে যত্ন
রক্ষার্থে শ্রমিক দিবস, মহারত্ন ।"
খুবই মুগ্ধ প্রিয়কবির কাব্যে, "মহান মে দিবসের কবিতা" ! মে দিবসের শতসহস্র শুভেচ্ছা,
শুভকামনা জানাই প্রিয় ।


• শাহীন নীল
অপূর্ব সুন্দর কবিতা,
জয় হোক,
ভালোবাসা রেখে গেলাম।।


• সুমিত্র দত্ত রায়
কাল থেকে কয়েকদিন আসরে থাকবো না।
ভীষণ সুন্দর লাগলো কবিতা। শুভেচ্ছা রইলো।


• রীনা বিশ্বাস-হাসি (মৈত্রেয়ী কবি)
জন হেনরির স্মরণীয় মেদিন। কৃষক মজুরের স্মরণীয়
মেদিন। ভুখা মানুষের স্মরণীয় মেদিন।


আপনি দারুণ লিখলেন কবিজি!!
মনে পড়ল কলেজের দিন গুলোর কথা।
অনেক ভালোলাগা আর রক্তিম অভিনন্দন
জানিয়ে গেলাম আপনাকে।
ভালো থাকবেন-----------


• রণজিৎ মাইতি
• চেতনা বোধের জাগ্রত ঐকতান। কবিতাটি হৃদয় ছুঁয়ে গেলো ।বিষয় ভাবনা সুন্দর ।অনেক শুভেচ্ছা


• আবু কওছর
খুব চমৎকার লেখনী।
মে দিবসের উদ্দেশ্য সফল হোক।
শুভকামনা কবিবর।


• শ.ম. শহীদ
খুব সুন্দর।
মহান মে দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।
শুভ-কামনা।।


• সঞ্জয় কর্মকার
অসামান্য মানবিক লেখা। আন্তরিক শুভকামনা রইল প্রিয় কবি।
________________________________________
________________________________________


মে দিবসের রক্তিম প্রভাতে আমার নিবেদন
ঐতিহাসিক মে দিবসের কবিতা
https://www.youtube.com/watch?v=VZCku7MpG6o
কণ্ঠে- শতাব্দী রায়চৌধুরী
https://www.youtube.com/watch?v=wCu7z68wWE0
কণ্ঠে- তাজরিন
https://www.youtube.com/watch?v=hC4xSP0HpnY
কণ্ঠে- মলয় নিয়োগী
https://www.youtube.com/watch?v=OSUqUrofMcc
কণ্ঠে- জয়শ্রী মাজি
https://www.youtube.com/watch?v=x0Sx_ECeCnQ
কণ্ঠে- অর্চনা মণ্ডল
https://www.youtube.com/watch?v=9tn1Aq_-wRo
কণ্ঠে- সুদীক্ষা (চঞ্চলা সাহা)
https://www.youtube.com/watch?v=v5IHreubsQs
কণ্ঠে-তৃষাগ্নি মণ্ডল
https://www.youtube.com/watch?v=XnHk8Omrcv0
কণ্ঠে- প্রিয়ঞ্জনা মুখার্জি
https://www.youtube.com/watch?v=TWqZ9I_wHOU
কণ্ঠে- অঙ্কুরিত সিনহা