শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
নবম পর্ব- আগমনী কাব্য-৯
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শরতের আবির্ভাবে নির্মল আকাশ, ধুসর শুভ্র কাশফুলের সমারোহ, বর্ষার অমৃতবারি সিঞ্চিত রৌদ্রকিরণোজ্জ্বল ধরিত্রী, এরই মাঝে মা মহামায়ার আগমন বার্তায় দিগ্বিদিক অনুরণিত। আর কিছুদিনের মধ্যেই মা ঊমা কৈলাশে পতিগৃহ থেকে তাঁর দুই কন্যা ও দুই পুত্র সহ মর্ত্যধামে পিতৃগৃহে আসবেন মাত্র কয়েকটা দিনের জন্যে। পিতৃগৃহে তাঁর এই আগমনকে ঘিরে মা মেনকা ও বাবা গিরিরাজের মতই মর্ত্যবাসী আনন্দে মাতোয়ারা।


আজকের দিনে প্রকৃত অর্থে কোনও উৎসবই আর বিশেষ স্থান বা বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা সকলেই চাই, অন্য সকলের সংগে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে। তা সত্বেও দুর্গাপূজোর আনন্দ উল্লাস মূলত বাঙালি সমাজের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত।


এই উৎসবমুখর পরিবেশে দেবী দুর্গার আরাধনার প্রাক্কালে যে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানটিতে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রায় সকলেই অংশগ্রহণ করে, সেটি হল পিতৃপুরুষের বিদেহী আত্মার অক্ষয় শান্তি কামনায় বর্তমান বংশধরদের প্রার্থনা- যার প্রধান অঙ্গ হল পিণ্ডদান ও তর্পণ।


মা মহামায়ার আরাধনার প্রাক্কালে নবরাত্রির পূর্বাহ্ণে ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু করে ১৬ দিন ব্যাপী পিতৃপক্ষের শেষ অমাবস্যার দিনটি হল মহালয়া। এই মহালয়ার দিনটিতেই পক্ষকাল ব্যাপী তর্পণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি। এ বছর ১৬ দিন ব্যাপী পিতৃপক্ষের সময় ৩০’শে ভাদ্র থেকে ১৩’ই আশ্বিন; ১৬’ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩০’শে সেপ্টেম্বর, শেষ হল। এই সময় প্রাতঃকালে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের ঘাটে ঘাটে চোখে পড়ে এই তর্পণ। দিল্লিতে গঙ্গা নদী নাই বা থাকলো, যমুনা নদীর ওয়াজিরাবাদ, রামঘাট ও ওখলার ঘাটে এই তর্পণ চোখে পড়ে। দিল্লির নিকটবর্তী হিন্ডন নদী, ও তার কিছু দূরের গড়গঙ্গার ঘাটে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ ভোর বেলায় পিতৃ তর্পণ করেন। এদের মধ্যে বাঙালিদের সংখ্যাই বেশি। তবে সারা দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলের কালী বাড়ি, বিশেষ করে, নতুন দিল্লি কালী বাড়ী, চিত্তরঞ্জন পার্ক কালীবাড়ি ও দক্ষিণ দিল্লি কালী বাড়ি ছাড়াও দ্বারকা ও রোহিনী কালীবাড়ির মত প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির পরিচালন কর্তৃপক্ষ মহালয়ার দিনটিতে সামূহিক তর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।


শাস্ত্র অনুযায়ী, ১৬ দিন ব্যাপী পিতৃপক্ষের মধ্যে অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা মহালয়ার দিনটি হল তর্পণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দিন। তাছাড়া এই মহালয়ার দিনটিতেই কেবলমাত্র পিতৃপুরুষ ছাড়াও আত্মীয় পরিজন,বন্ধুবান্ধব,এমনকি পরিচিত অপরিচিত যে কোনও মৃত মানুষের আত্মার শান্তি কামনায় ‘তর্পণ’ বিধিসম্মত।


প্রকৃতির নিয়ম মেনে যুগের অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনের পথ বেয়ে এখন এই ধর্মীয় ক্রিয়াকাণ্ড ‘ডিজিটাল-ভারত’ যুগে প্রবেশ করেছে। আজকের এই চরম ব্যস্ততার দিনে পূর্বপুরুষের শান্তি কামনায় পিণ্ডদান ও তর্পণের জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থল গয়াধামে যাওয়া সকলের পক্ষে হয়ত সম্ভব হয়ে উঠে না। মনের বাসনা অতৃপ্তই থেকে যায়। এই অতৃপ্ত বাসনা পূরণের সুযোগ দিতে ডিজিটাল ভারতের যুগে আসরে অবতীর্ণ হয়েছে অন লাইন পিণ্ডদান কালচার। বাড়িতে বসে অন লাইন পিণ্ড দানের সুবিধার মত হয়তো বা কিছুদিনের মধ্যেই মহালয়ার এই একটি দিনের তর্পণ অনুষ্ঠানেও অনলাইন কালচারের প্রবেশ ঘটবে! তখন আর পিতৃ পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় কোনও জলাশয়ের ঘাটে যাবার প্রয়োজন পড়বে না। বাড়ীতে বসেই এই কর্তব্য সমাধা করা যাবে কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে স্কাইপের মাধ্যমে দূরস্থিত কোনও নদী বা অন্য কোনও জলাশয়ের ঘাটে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে। উপায়ই বা কী; সময়ের যে বড় অভাব!


তথ্যসূত্রঃ Airworldservice (রচনাঃ কৃষ্ণধন রায়)


শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
নবম পর্ব- আগমনী কাব্য-৯
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শরতের আকাশেতে সাদামেঘ উড়ে,
ছড়ায় কিরণ রবি সারা বিশ্ব জুড়ে।
কাননে ফুটিল সব কুমুদ কমল,
মধু আহরণে তথা আসে অলিদল।


আগমনী সুর ভাসে শারদ আকাশে,
বংশীর ধ্বনি দূর হতে ভেসে আসে।
কচি কচি ধানখেতে মনোহর শোভা,
শালুক ফুলের মেলা ভরা ছোটডোবা।


অজয়ের চরে ঝরে সোনালী কিরণ,
যাত্রীদের আনাগোনা সবার মিলন।
ভাটিয়ালি গান গেয়ে বৈঠা ধরে মাঝি,
সবাকার হিয়া মন পুলকিত আজি।


শরতের সোনারোদ মিলায় সন্ধ্যায়,
চাঁদ ওঠে হাসে ধরা শুভ্র জোছনায়।