কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে গ্রাম বাংলার জীবন ও প্রকৃতির রূপকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি একজন জনপ্রিয় কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তাঁর কবিতাগুলি সহজ সরল ভাষায় গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের আনন্দ-বেদনা, সংগ্রাম এবং প্রকৃতির সাথে তাদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে তুলে ধরে।

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতা মূলত গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। তাঁর কবিতায়  থাকে মাটির গন্ধ, সবুজ শ্যামল প্রান্তর, নদীর কলতান আর পাখির ডাক। তিনি গভীর মমতায় গ্রামীণ জীবনের সাধারণ ছবিগুলি এঁকেছেন। কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতি - সমাজের এই প্রান্তিক মানুষের জীবনসংগ্রাম তাঁর কবিতায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। তিনি তাদের দৈনন্দিন জীবনের দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযোগ এবং বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাকে শব্দে রূপ দিয়েছেন।

তাঁর কবিতায় গ্রামীণ প্রকৃতির এক মনোমুগ্ধকর চিত্র পাওয়া যায়। ধানক্ষেতের সবুজাভ, নদীর স্রোত, বাঁশঝাড়ের ছায়া, পাখির ঝাঁক, কাশফুলের সৌন্দর্য - সবকিছুই তাঁর কবিতায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতির এই উপাদানগুলি শুধু পটভূমি নয়, বরং গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি প্রকৃতির রূপের মাধ্যমে মানুষের মনের অনুভূতিকেও প্রকাশ করেছেন।

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতার ভাষা সহজ ও সাবলীল। তিনি জটিল শব্দ ব্যবহার না করে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকেই কবিতার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলে তাঁর কবিতা সহজেই পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং গ্রামীণ জীবনের প্রতি একাত্মতা অনুভব করায়।

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, গ্রামীণ জীবনও সাহিত্য রচনার এক শক্তিশালী উৎস হতে পারে। তাঁর কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এবং গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে চিরকাল মানুষের মনে জায়গা করে থাকবে। তিনি নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমী কবি, যিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনকে অমরত্ব দান করেছেন।

শীতল তরুর ছায়ে ...আছে আমাদের গাঁয়ে
আমার গাঁয়ের কবিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
কলমে- কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

মাটির পাঁচিলে ঘেরা উঠোনে বাঁশের বেড়া
দুটি কাক ডাক দিয়ে যায়,
কভু আসে বনটিয়া উড়ে যায় শিস দিয়া
কভু নাচে বাঁশের বেড়ায়।

পূবেতে উঠিল রবি প্রভাতের লাল ছবি
নানা ফুল ফুটে ফুলবনে,
বাতাসে সৌরভ ভাসে মধুলোভে ছুটে আসে
পুঞ্জে পুঞ্জে যত অলিগণে।

গাঁয়ে আছে সোনা দিঘি জল করে ঝিকিমিকি
গাঁয়ের জেলেরা ধরে মাছ,
শানবাঁধা দিঘি ঘাটে ছেলেরা সাঁতার কাটে
পাড়ে সারি সারি তালগাছ।

গাঁয়ের বধূরা সব করে কত কলরব
কাপড় কাচে মাজে বাসন,
রাঙামাটি পথ দিয়ে কাঁখেতে কলসী নিয়ে
জল নিতে আসে বধূগণ।

দিবা অবসান হয় অজয় তটিনী বয়
নেমে আসে সাঁঝের আঁধার,
কাব্য রসের কাণ্ডারী কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
লিখে কবি কবিতায় তার।