যা দেবী সর্বভূতেষু… মহিষাসুরমর্দিনী
শ্রী শ্রী চণ্ডীস্তোত্রম্ – ষষ্ঠ পর্ব। মহা-শ্রীপঞ্চমী।
সংগ্রহ, সম্পাদনা ও স্তোত্রপাঠ- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী।


মহালয়ার শেষে আসে মহাপঞ্চমী। শারদোৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই দিনে। পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী প্রতিমা স্থাপিত হয়, দেবীর আগমন ঘটে মণ্ডপে মণ্ডপে। পূজার দ্বিতীয় দিন হচ্ছে মহাষষ্ঠী। পুরাণমতে, ষষ্ঠীর দিনটিকে দুর্গার বাপের বাড়ি আসার দিন বলে মনে করা হয়। এ দিনে দেবী তাঁর চার সন্তান (কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, ও লক্ষ্মী) নিয়ে মর্ত্যে আগমন করেন।


আজ হল শ্রীপঞ্চমী। পঞ্জিকা বলছে এবার মা আসছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চেপে। দশমীর দিন তিনি ফিরেও যাচ্ছেন ঘোড়ায় চেপে। অর্থাৎ এই বছরে দেবীর আগমন ও গমন ঘোটকে। শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতরা বলছেন, ঘোড়ায় আগমন ও গমন মোটেই শুভ নয়। ঘোড়া ছটফটে প্রাণী। সে যখন যায়, সব কিছু ছত্রভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দেবীর ঘোটকে আগমন ও গমনে প্রমাদ গুনছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। এতে ফসল নষ্ট হওয়ার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা ও খরা হতে পারে। দেখা দিতে পারে মহামারী ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। শাস্ত্র বলে-দেবীর মর্তে আগমন হয় সপ্তমীতে আর গমন হয় দশমীতে।


এই দুটো দিন কোন বার পড়েছে সেই অনুযায়ী ঠিক হয় দেবী কীসে আসবেন আর কীসে যাবেন। উপরের এই শ্লোক দেখে বোঝা যাচ্ছে, সপ্তমী ও দশমী রবিবারে পড়লে দেবী গজ বা হাতিতে আসবেন ও যাবেন। যদি সপ্তমী শনিবার বা মঙ্গলবার হয় তা হলে ঘোটক বা ঘোড়ায় আসবেন। যেমনটা এই বারে হয়েছে। বৃহস্পতি বা শুক্রবার সপ্তমী হলে দেবী দোলায় আসবেন। আর বুধবার সপ্তমী বা দশমী পড়লে, তিনি নৌকায় আসবেন। দেবী কীসে করে এলে ঠিক কী হতে পারে, তার বর্ণনাও শাস্ত্রে আছে। যেমন বলা হচ্ছে, “গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা।” অর্থাৎ গজে এলে বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয় অর্থাৎ ফসল ভাল হয়। আবার “ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে” এটি বলা হয় ঘোটকের ক্ষেত্রে। নৌকার ক্ষেত্রে বলা হয় “শস্যবৃদ্ধিস্থুতাজলম”। অর্থাৎ নৌকায় এলে শস্য দ্বিগুণ হয় কিন্তু বন্যা দেখা দিতে পারে। দোলায় বা আগমন বা গমনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, “দোলায়াং মরকং ভবেত।” অর্থাৎ দোলায় এলে বা গমন হলে মহামারী, ভুমিকম্প বা বড় রকমের যুদ্ধ হতে পারে।


দুর্গাপূজার মূল উৎসবকাল পাঁচদিন- মহা ষষ্ঠী, মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহা নবমী ও বিজয়া দশমী। বিজয়ার দিনে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোক থেকে কৈলাসে ফিরে আসেন। দেবীর ঘোটকে আগমন ও ঘোটকে গমন। ফল “ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে”


তাই আজ এই পূণ্য শুভলগ্নে আমাদের সম্মিলিত প্রার্থনা হোক—-


যা দেবী! সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


যা দেবী! সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


যা দেবী! সর্বভূতেষু শান্তিরূপেন সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।


আসুন, আমরা সকলেই আজ থেকেই শক্তি আরাধনায় রত হই। সাম্প্রদায়িকতা মুছে ফেলে জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই পূজার উত্সবে মেতে উঠি। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!



শ্রী শ্রী দুর্গাত্সব-১৪২৬ শারদীয়া পূজা-সংকলন
মহা শ্রীপঞ্চমী – দুর্গাপূজার কবিতা- ১
কবি- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী


শ্রীপঞ্চমী তিথি আজি পূণ্য শুভক্ষণ,
ধরায় ঘোটকোপরি দেবী আগমন।
কৈলাস হৈতে আসেন গিরিরাজকন্যা,
সবার হৃদয়ে বহে পুলকের বন্যা।


হৃদয়ে পুলক জাগে এসে গেল পূজা,
ধরায় আসেন মাতা দেবী দশভূজা।
পূজার মণ্ডপে ভিড় দর্শনার্থীগণে,
দেবীরে প্রণাম করে সন্তানাদি সনে।


সুশোভিত ফুলমালা শোভে চারিধার,
মণ্ডপে প্রতিমা হেরি বিশাল আকার।
ঢাক বাজে কাঁসি বাজে হয় শঙ্খধ্বনি,
মণ্ডপে বিরাজে দেবী মহিষ-মর্দ্দিনী।


মহা শ্রীপঞ্চমী তিথি পূণ্য শুভক্ষণ,
শ্রীপঞ্চমী কাব্য লিখে শ্রীমান লক্ষ্মণ।