পিছন থেকে টেনে ধরেছ বহু বছর,
অন্যায়ভাবে কিনা আজ সেই প্রসঙ্গ
অবান্তর।এটুকু শোনো,তখন প্রায়শ
অনেক টিকা-টিপ্পনী মুখ বুজে সহ্য
করেছি।
জানো,অবসর সময়ে বেশ মনে পড়ে
স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ
শেষে চাকুরীর প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন
তারি পরীক্ষায় কৃতকার্যের পরে হাতে
এলো শেষ-সম্বল,কর্ম ক্ষেত্রে নিযুক্তির
তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির প্রমাণপত্র
তখন অন্তরালে থেকে ব্যঙ্গ হাসি হেসে
বললেন বিধাতা,‘যাবি কোথায়?’সত্যি
তাই!ঘটলো অদ্ভুত ব্যাপার!কিছু বুঝে
ওঠার আগেই কোথা থেকে অজস্র বাধা
বিপত্তি এসে সব পথ আগলে দাঁড়ালো।
আকাশ মুহূর্তে ঢাকলো মেঘে।
কর্মক্ষেত্রে যোগদান?তখন থেকে হয়নি
আজও।ভেবেছি,কেন এই পরিণতি?
কোথাও থেকেছে কি ত্রুটি?
অন্তরাত্মাকে জিজ্ঞেস করেছি,‘বলবো কী
যদি কেউ প্রশ্ন করে,জানো কি চাষাবাদ?
আছে কি কারখানায় কাজের প্রশিক্ষণ?’
সত্যিই তো,পঁচিশ বছর ছুটেছি পুঁথিগত
বিদ্যায় সেরা হবার দৌড়ে।
তারপর,বিশেষ একটি পেশার প্রশিক্ষণ।
সে সময় অবধি কেউ একবারও বলেনি,
‘যাও,কোদাল হাতে মাঠে ঘাটে গিয়ে
চাষাবাদ করতে শেখো কিংবা কাজের
প্রশিক্ষণ নাও কলে কারখানায় সশ্রম
কাজ করতে’।
এই পর্যায়ে এসে,বলো,‘কায়িক পরিশ্রম
করার অনভ্যাসে কী করে নামতে পারি
দক্ষ শ্রমিকদের সাথে প্রতিযোগিতায়!
তাই করেছি ইতস্তত।
ঠিক সে সময় কানে এলো অসংখ্য দক্ষ
কৃষক যন্ত্রদানবদের কাছেই হার মেনে
ফিরে গেছে।বহু কলকারখানা ও বন্ধ।
তারা অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে চলে
গেছে দূর-দূরান্তরে।
স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথিগত
শিক্ষা এলো না কাজে,সব সার্টিফিকেট
হলো বাড়তি বোঝা!
তখনও দেখেছি নীল শাড়ি পরিহিতা
এক রমণী,গলায় নক্ষত্রের মালা,সারা
শরীরের পোশাক আষাকও রত্নখচিত।  
বেশ জ্বলজ্বল করতো দেখে সাধ হতো
ছুঁয়ে দেখার!
শৈশব থেকে তার সাথে ছিল প্রেমের
বন্ধন।ভাবতাম,সেটি বজায় থাকবেই
আজীবন।সেও হাত বাড়িয়ে বলতো,
‘ধর তো,দেখি!’
পিছন টান,উপরে ওঠার সাধ্য হলো
না।বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে জীবনে
সেই আকাশকে ছুঁতে না-পারার এটা
গুপ্ত রহস্য।
তখন কে জানতো,কোনও ‘ব্ল্যাক-হোল’
এর মতো গুপ্তঘাতকের কারণে আকাশ
ছোঁয়ার বাসনা এ জীবনে অপূর্ণ থেকে
যাবে।
ব্যর্থ যৌবন,এখন পেরিয়ে এসেছি সেই
চাকুরীতে অন্তর্ভুক্তির সময় সীমা,বেঁচে
আছি হতাশাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে।
যেটুকু অর্থোপার্জন করছি,তাতে দুমুঠো
ভাত জুটছে বটে কিন্তু পারিনি বার্ধক্যে
পিতামাতার চিকিৎসা ও পথ্যের যথাযথ
বন্দোবস্ত করতে।আজ তারা আর বেঁচে
নেই।
দীনহীনের মতো অবসরে তাকিয়ে থাকি
সাহারার দিকে।আকাশও বুঝেছে,আমার
সামর্থ্য এখন পরাহত!সে আজকাল আর
হাত বাড়িয়ে বলে না,‘ধর তো,দেখি!’
আমিও আর সেদিকে তাকাই না ফিরে।