>—•—< নারী কণ্ঠে:


সত্তর বছরের যুবতী মেয়েটি এখন ‘বুড়ি’ ডাকে সম্বোধিত হয়,
কী আছে ষোল আর সত্তরের ফারাকে?
কি আবেদনময়ী শরীরটা কেমন থুবড়ে গেল এভাবে!
কত মসৃণ চাকচিক্য চামড়াগুলো কুঁচকে গেল কিভাবে!
কি ফুরফুরা মনটা কেমন ভারী হয়ে গোঙাচ্ছে এখন!
ভালোবাসার টানগুলো কেমন বেটানে পরিণত হলো!
কারো নজর সে আর কাড়ে না, কি হয়ে গেল এসব!
বাহ্যিকটা বদলেছে তবু ভেতরটা বদলেনি, আমি যে এখনো ষোল।


দেহ সক্ষমতা হারিয়েছে, ভেতরটা যে এখনো কারো স্পর্শাকাঙ্ক্ষী,
এখনো অমৃত আশা: কোনো বীর পুরুষ আসুক আবার ঝড়বেগে;
—আমি সর্বস্ব উজাড় করে সঁপে দেবো তাকে।
মাথা গোঁজার কোনো একটি শক্ত বুক ভিড়ুক,
আসুক কোনো ইউসুফ দিক জুলেখার মতো ষোল রূপ;
আরো কিছুক্ষণ কাটিয়ে যেতে চাই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত।
কিন্তু একটি বার্ধক্য, আর একটি ‘বুড়ি’ ডাক, সব করে দিলো ধ্বংস!
ইচ্ছেরা ভীষণ বেপরোয়া, তবে প্রাপ্তি’রা কেন এতটা অভিমানী?


>—•—< পুরুষ কণ্ঠে:


আশি বছরের যুবক ছেলেটিও এখন নেহাত ‘বুড়ো’ ডাকে সম্বোধিত,
কি বলীয়ান টানটান চামড়াগুলো কেমন কুঁচকে গেল!
রঙ্গ মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো সত্তায় কি ধূসর একটা পর্দা নেমে এল!
প্রেম-ভালোবাসাগুলো এখন বিকর্ষিত হচ্ছে চতুর্দিক থেকে।
উৎফুল্ল মন আর সক্রিয় দেহটা কেমন নিথর হয়ে এল!
বীর পুরুষী চোঁটগুলোকে এখন শীতলতায় গ্রাস করে নিচ্ছে,
শক্তিরা প্রসারিত হয়ে দিগ্বিদিক অজ্ঞাত হতে যাচ্ছে;
শুধু ইচ্ছেগুলো এখনো আগের মতোই ছেলেমনা রয়ে গেল।


ভেতরটা এখনো সৌন্দর্যে প্রবল টান অনুভব করে;
কোনো এক রমনী আবার এসে বিলিয়ে দিক প্রেম,
আরো কিছুক্ষণ কেটে যাক রোমান্সে যৌবনভরা সময়;
কিন্তু সমাজের চোখে এসব নাকি আর এই বয়সে পায় না শোভা।
কেন পাবে না? বয়স তো সংখ্যা কেবল, যৌবন তো কমে না!
ইচ্ছেরা তো এখনো আঠারো, অযথাই যুক্ত হলো একটি ‘বৃদ্ধ’ শব্দ;
এই সমাজই আমায় বৃদ্ধ করেছে, যৌবনটুকু কেড়ে নিয়েছে।
ভাবিনি একটি ‘বুড়ো’ ডাক কখনো আমায় করবে যৌবনহারা।


>—•—< মিশ্র কণ্ঠে:


যৌবন-ক্ষণ এতটা ক্ষীণ! আজ ফুরায়ে করছি বিলাপ,
এই অবেলায় এসেও যৌবন সাধি, যৌবনের জন্য কাঁদি;
যৌবন যাদের আজ, তোমরা কর সময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যবহার।
আজ আমি বার্ধক্যের খাঁচায় বন্দি পাখি, বন্ধ ফেরার পথ;
আমি ফিরতে চাই, ভিড়তে চাই যৌবনের টগ্ববগে তারুণ্যে,
দাপাতে চাই, কাঁপাতে চাই, খেলতে চাই ভরাযৌবন নদে;
অথচ শেষ ইচ্ছেটাও আজ ক্রন্দন করছে অপূর্ণতার ডরে!
তবু আরেকটি বার সাঁতরাতে চাই যৌবনের সতঃফূর্ত জোয়ারে।


>—•—< কবি’র কণ্ঠে:


মৃত্যুর আগে প্রতিটি বার্ধক্য হাজার বার মরে!
সহস্র আক্ষেপ, অভিযোগ, অভিমানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
না বলা ব্যথার আড়ালে গুঙিয়ে মরে বার্ধক্যের যুবক-যুবতী;
বার্ধক্যে‌ কেউ যায় না, যেতে চায় না, বার্ধক্যে গেলেও যৌবন হারায় না।
শরীর দুমড়ে-মুচড়ে গেলেও অভিজ্ঞতার ভরাযৌবন বয়,
তাই ভেঙে যাক বার্ধক্যের কলঙ্ক, যেথা ভর করে পৃথিবীর সমস্ত পাপ;
সরিসৃপের মতো খোলস বদলিয়ে ফিরে পাক ফের নব যৌবন-স্বাদ,
যৌবনভরা বার্ধক্যের সাথে মিশে যাক প্রকৃতির সব যৌবন, ভেঙে বাঁধ‌।


রচিত: ০৮ মার্চ ২০১৯, নিজ ভবন, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ