পৃথিবী ছাড়তে হবে, মৃত্তিকায় মিশতে হবে,
এটি খুবই হাল্কা একটি কথা;
তবে এ কথার মতো ভারি আর কী হতে পারে!
অজ্ঞাত সন্ধানে পৃথিবী খুঁজে পাওয়ার পরে
আঁকড়ে ধরে থেকে যাওয়ার যে তীব্র ব্যাকুলতা,
সে ব্যাকুলতার নামান্তরই জীবন।

একদিন সব ব্যাকুলতা হেরে যাবে একটি ভয়ঙ্কর শব্দের কাছে,
যেই শব্দ জন্মের পরেই পিছু লেগেছে পরাজিত করতে,
এত ভয়ঙ্কর শব্দ অভিধানে আর নেই;
শব্দটি হলো: ‘মৃত্যু’, অর্থাৎ অনন্ত বিনাশ।
আচ্ছা, এই ‘অনন্ত’ শব্দের ভার কত?
কতদিন গড়ালে তাকে বলব অনন্ত!
সহস্র বছর, লক্ষ বছর, কোটি বছর! তবে কোটি-কোটি বছর?
নাকি সংখ্যাটা অন্তহীন?
কী আজব! কী ভয়ঙ্কর! কী দুর্বিষহ এই হিসাব!

আচ্ছা আমরা কেন মৃত্যুর ভয় পাই?
মৃত্যুকে তো সাথে নিয়েই জন্মেছি সবাই।
তবে মৃত্যু্র কথা শুনলে এত অস্থির লাগে কেন?
          কারণ, মরলে বারবার জন্মাই না আমরা।
কেন জন্ম আর মৃত্যু্র চির বিপরীতমুখী সম্পর্ক?
কেন নিয়তির কাছে এই মহাজীবন সদা সমর্পিত?
কেন অসীম অনন্তে গুটি কয়েক বছরের আয়ু?
হাজার কিংবা লক্ষ কোটি বছরের কেন নয়?
তবে এই মহাকাল কার? কে করল এই অসম ফন্দি?
কেন হলো একপাকক্ষিক সন্ধি?
যেই সন্ধিতে কেবল জীবনকেই কোণঠাসা করা হয়েছে!

কার ইশারায় অস্তিত্বের যুদ্ধে নামলাম?
জীবনকে মৃত্যুর মাঝসমুদ্রে ফেলে খেলছে কে নারকীয় খেলা?
কে সেই মহা নিষ্ঠুর ফন্দিবাজ? কেন সে নির্বিকার?
কী খেলার আসর জমিয়ে বলি দিচ্ছে আমাদের!
আওয়াজ তোলো সেই ফন্দিবাজের পানে,
কেন একটা মৃত্যুই কেবল অনন্ত প্রাপ্তি?
কীসের অভাবে সে আমাদের সময়কে করল সংকীর্ণ?
কেন জীবনকে করল ক্ষীণ?
কেন আমাদের সনে করল অতি কার্পন্য?

আচ্ছা সেই ধূর্ত-শক্তির অস্তিত্ব কেমন?
সেও কি ইলেকট্রনের মতোই প্রতিটি বস্তুর সাথে মিশে আছে?
নাকি কোথাও আসন পেতে বসে আছে নিশ্চুপ?
কেন কেবল মৌখিক সংজ্ঞাতেই তার সাক্ষাৎ?
আর কোথাও নেই তার ছাপ, যত হোক সংলাপ, সংঘাত!
নাকি সে বড্ড লাজুক? তাই পর্দার আড়ালেই শোভা পায়!
তবে থাকুক সে পর্দার আড়ালেই অনন্তকাল, মহাকাল;
যেই অনন্তকে ঢেলে সাজিয়েছে আমাদের বিপরীতে।
নিজেই সে মরুক হাহুতাশে, পড়ুক কপালে চিন্তার ভাঁজ,
নচেৎ সম্মুখে এসে জবাব দিক ছিঁড়ে পর্দা আর লাজ,
যৌক্তিক হলে তবেই চোখ বুজে মেনে নেবো তার রাজ।

উত্তর চাই—
স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রাণ কেন তব খেলার গুটি?
বলো, মৃত্যুর আলিঙ্গনে কতদিন?
কতদিন গড়ালে তাকে বলব অনন্ত?
কতদিন? কতদিনে আবার ঘরোয়া হব?
কতদিন গড়ালে স্বীয় অস্তিত্ব ফিরে পাব?
মিথ্যা স্বপ্ন কিংবা রূপকথা নয়,
চাক্ষুষ সত্যই কেবল ভেঙে দিতে পারে এ সংশয়।
হে মহাশক্তি, ছাড়ো তব নিরবতার বড়াই;
নতুবা হে মনুষ্যজাত, এসো বন্ধ করি জাতের লড়াই।


রচিত: ০৪ মার্চ ২০১৯, চলমান বাস- ঢাকা হতে গোপালগঞ্জ গন্তব্যে।