(আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সংক্ষিপ্ত সম্পূর্ণ ইতিহাস এক গদ্য কবিতায়।)


১৯৪৭ সাল,
বিভক্ত ভারত উপমহাদেশ;
জন্ম পাকিস্তানের ভিন্ন দুটি সংস্কৃতির সমন্বয়ে,
‘পশ্চিম পাকিস্তান’ ও ‘পূর্ব পাকিস্তান’ অভিহিত তত্ত্বে।
কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন শোষক গোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তান।
নিম্ন দৃষ্টি ও শোষণ কেন্দ্র হলো নিরীহ জনতার পূর্ব পাকিস্তান।
অধিকার হারা এই জনতারা পৈশাচিকতার কবলে হলো বন্দী।
অসদ্বিচারেও নিতে হলো বাধ্যবাধকতা, যথা ক্ষুণ্ণ হলো মনুষ্যত্ব।


১৯৪৮ সাল,
“উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”;
ঘোষণা করেন পাকিস্তান সরকার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
বাঙালির অস্তিত্বে বিধলো ঘা এ নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে।
সূত্র দিলো ঘটা নিগূঢ় ক্ষোভ ও নিকষ বিরূপতার।
সূচনা হলো বিদ্রোহের বাংলা ভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে।
আন্দোলন প্রকট হতেই দমাতে করল জারি ১৪৪ ধারা।
নিষিদ্ধ হলো ঢাকায় মিছিল-সমাবেশ, এই মানব-কলঙ্কের শঠে।


বাংলা ভাষার সমমানে,
তবু নির্ভীক বাঙালিদের প্রতিটি জবানে ধ্বনিত হলো সোচ্চার,
সাম্যের স্লোগানে বাংলা ভাষার ভালোবাসা বুকে বিঁধে অগ্রণী বাঙালি।
অতীদ্বিশ্বের এই প্রথম সংঘটিত হলো ভাষা আন্দোলন,
ভবিষ্যদ্বিশ্বেও আশঙ্কা নেই মাতৃভাষার টানে এরূপ ঘটন।
যথা সংঘবদ্ধ হয়েছিল বাংলা ভাষাভাষীর সর্বত্র নির্বিকারে।
ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ জনতা,
প্রদর্শন করে তীব্র অসন্তোষ, ফেটে পড়ে ক্রুদ্ধ আগ্নেয়গিরি।


১৯৫২ সাল,
ফেব্রুয়ারির ২১ আর ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ ফাল্গুনের ৮ এ- বিরূপতা আর ক্ষোভের চূড়ান্ত রূপ হলো অঙ্কিত বাংলায়।
মাতৃভাষার টানে বিশ্ব সেরা দৃষ্টান্ত সৃজিতে হলো ধাবমান,
দুর্নিবার বাঙালিরা ছুটলো বিক্ষোভ মিছিল লয়ে,
এ প্রতিবাদী ক্ষুব্ধ র‍্যালি অগ্রসরিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ মুখে,
১৪৪ ধারা ভঙ্গের অজুহাতে শোভাযাত্রায় দুর্ধর্ষ অস্ত্র চালায় পুলিশ,
তবু অদম্য বাঙালিদের দমাতে পারেনি কালো শক্তির হিংস্রতায়।


২১শে ফেব্রুয়ারি,
বাহান্নের এই দিনটি হৃদয়ে দেয় তাগা;
দুর্দমনীয় বাঙালিরা প্রাণ রেখে ও এগিয়ে গেল লক্ষ্যে!
জাতির মুখে ফোটাতে মাতৃভাষা প্রাণ দিলো-
চাকুরিজীবি আঃ সালাম, শ্রমজীবী আঃ জব্বার, বিশ্ববদ্যিালয়ের তরুণ ছাত্র- রফিক, বরকত, শফিউর,
রিকশাচালক আঃ আউয়াল, শিশুশ্রমিক অহিউল্লাহ, অজ্ঞাত বালকসহ
ক্ষতবিক্ষত কত আরো দিয়েছে প্রাণ শতাধিক ভাষাপ্রেমিক।


রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
এ স্ত্রোগানের মিললো সার্থকতা বাঙালির তরে,
বিশ্ব দ্বারে বীরের প্রতীক ভাষার জন্য যারা প্রথম আনে।
আন্দোলনের তীব্রতায় নতি স্বীকারে বাধ্য কেন্দ্রীয় সরকার।
অদ্যাবধি ১৯৫৬-সনে বাংলাকে প্রদান করে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।
মায়ের ভাষা মায়ের মুখেই চিরতরে পেল ঠাঁই।
বাঙালিদের এই কৃতিত্বে বিশ্ববাসী জানিয়ে গভীর শ্রদ্ধা-
১৯৯৯-সনে ইউনেস্কো করে ঘোষণা:
“২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”।



॥ রচিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, আপনালয়,‌ কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ॥