মা , যদি তুই আকাশ হতিস ,
           আমি চাঁপার গাছ ,
তোর সাথে মোর বিনি - কথায়
          হত কথার নাচ ।
তোর হাওয়া মোর ডালে ডালে
          কেবল থেকে থেকে
কত রকম নাচন দিয়ে
          আমায় যেত ডেকে ।
মা ব'লে তার সাড়া দেব
          কথা কোথায় পাই ,
পাতায় পাতায় সাড়া আমার
          নেচে উঠত তাই ।
তোর আলো মোর শিশির - ফোঁটায়
          আমার কানে কানে
টলমলিয়ে কী বলত যে
          ঝলমলানির গানে ।
আমি তখন ফুটিয়ে দিতেম
          আমার যত কুঁড়ি ,
কথা কইতে গিয়ে তারা
          নাচন দিত জুড়ি ।
উড়ো মেঘের ছায়াটি তোর
          কোথায় থেকে এসে
আমার ছায়ায় ঘনিয়ে উঠে
          কোথায় যেত ভেসে ।
সেই হত তোর বাদল - বেলার
          রূপকথাটির মতো ;
রাজপুত্তুর ঘর ছেড়ে যায়
          পেরিয়ে রাজ্য কত ;
সেই আমারে বলে যেত
          কোথায় আলেখ - লতা ,
সাগরপারের দৈত্যপুরের
          রাজকন্যার কথা ;
দেখতে পেতেম দুয়োরানীর
           চক্ষু ভর - ভর ,
শিউরে উঠে পাতা আমার
          কাঁপত থরোথরো ।
হঠাৎ কখন বৃষ্টি তোমার
          হাওয়ার পাছে পাছে
নামত আমার পাতায় পাতায়
          টাপুর - টুপুর নাচে ;
সেই হত তোর কাঁদন - সুরে
          রামায়ণের পড়া ,
সেই হত তোর গুনগুনিয়ে
          শ্রাবণ - দিনের ছড়া ।
মা , তুই হতিস নীলবরনী ,
           আমি সবুজ কাঁচা ;
তোর হত , মা , আলোর হাসি ,
          আমার পাতার নাচা ।
তোর হত , মা , উপর থেকে
          নয়ন মেলে চাওয়া ,
আমার হত আঁকুবাঁকু
          হাত তুলে গান গাওয়া ।
তোর হত , মা চিরকালের
          তারার মণিমালা ,
আমার হত দিনে দিনে
          ফুল - ফোটাবার পালা ।


(শিশু ভোলানাথ কাব্যগ্রন্থ)