মধুর সূর্যের আলো , আকাশ বিমল ,
সঘনে উঠিছে নাচি তরঙ্গ উজ্জ্বল ।
         মধ্যাহ্নের স্বচ্ছ করে
         সাজিয়াছে থরে থরে
ক্ষুদ্র নীল দ্বীপগুলি , শুভ্র শৈলশির ।
         কাননে কুঁড়িরে ঘিরি
         পড়িতেছে ধীরি ধীরি
পৃথিবীর অতি মৃদু নিশ্বাসসমীর ।
একই আনন্দে যেন গায় শত প্রাণ —
বাতাসের গান আর পাখিদের গান ।
         সাগরের জলরব
         পাখিদের কলরব
এসেছে কোমল হয়ে স্তব্ধতার সংগীত-সমান ।




আমি দেখিতেছি চেয়ে সমুদ্রের জলে
শৈবাল বিচিত্রবর্ণ ভাসে দলে দলে ।
         আমি দেখিতেছি চেয়ে
         উপকূল-পানে ধেয়ে
মুঠি মুঠি তারাবৃষ্টি করে ঢেউগুলি ।
         বিরলে বালুকাতীরে
         একা বসে রয়েছি রে ,
চারি দিকে চমকিছে জলের বিজুলি ।
তালে তালে ঢেউগুলি করিছে উত্থান —
তাই হতে উঠিতেছে কী একটি তান ।
         মধুর ভাবের ভরে
         হৃদয় কেমন করে ,
আমার সে ভাব আজি বুঝিবে কি আর কোনো প্রাণ ।




হায় মোর নাই আশা , নাইকো আরাম —
ভিতরে নাইকো শান্তি , বাহিরে বিরাম ।
         নাই সে সন্তোষধন
          জ্ঞানী ঋষি যোগীগণ ।
ধ্যানসাধনায় যাহা পায় করতলে —
         আনন্দ-মগন-মন
         করে তারা বিচরণ ,
বিমল মহিমালোক অন্তরেতে জ্বলে ।
নাই যশ , নাই প্রেম , নাই অবসর —
পূর্ণ করে আছে এরা সকলেরি ঘর ।
         সুখে তারা হাসে খেলে ,
         সুখের জীবন বলে —
আমার কপালে বিধি লিখিয়াছে আরেক অক্ষর ।




কিন্তু নিরাশাও শান্ত হয়েছে এমন
যেমন বাতাস এই , সলিল যেমন
         মনে হয় মাথা থুয়ে
         এইখানে থাকি শুয়ে
অতিশয় শ্রান্তকায় শিশুটির মতো ।
         কাঁদিয়া দুঃখের প্রাণ
         করে দিই অবসান —
যে দুঃখ বহিতে হবে , বহিয়াছি কত ।
আসিবে ঘুমের মতো মরণের কোল ,
ধীরে ধীরে হিম হয়ে আসিবে কপোল ।
         মুমূর্ষু শ্রবণতলে
         মিশাইবে পলে পলে
সাগরের অবিরাম একতান অন্তিম কল্লোল ।


   Shelley
  (অনূদিত কবিতা)