ভাবতে ভালো লাগে
আসবে-আসবেই সে অনাগত কাল
যেদিন মানব সভ্যতা মুক্ত হবে এই
ক্রুর কপটতা, প্রবল লোভ আর
নীচ স্বার্থবুদ্ধির নাগপাশ হতে।


আাসবেই সে যুগ-সে যুগে স্বতঃই স্বীকৃত হবে
বিধাতার বিশ্বে প্রত্যেক মানুষই
পূর্ণোদর আহারের অধিকারী।
বিশজনের ক্ষুধার অন্ন একজন লুটে নিয়ে
পারবে না এমন অযথা অপচয় করতে
ধনীকের বিলাস প্রাসাদ দুয়ারে
শত শত মানব সন্তান
প্রার্থীর বেশে আসবে না আর-প্রসাদ প্রত্যাশী হয়ে।
দেখা যাবে না মহানগরীর পথে পথে
পয়ঃপ্রণালীর উচ্ছিষ্ট অন্ন নিয়ে
কুকুরের সাথে মানুষের কাড়াকাড়ি
ভাবতে ভালো লাগে
আসবে-আসবেই সে অনাগত দিন
যেদিন লুপ্ত হয়ে যাবে ক্ষমতাশালীর
ক্ষমতা অপব্যবহারের কু অধিকার
মাত্র শক্তি ন্যূনতার ক্রুটীতে
নিরপরাধ মানব জাতি
হবে না আর প্রবলের দ্বারা অবমানিত উৎপীড়িত
বৈষম্যের বিষম উৎপাত অন্তর্হিত হবে
মানুষের আপন হাতে গড়া সমাজ বিধি হতে।
বর্তমান যুগ দেবতা নিয়ে এসেছেন কি তারই আশ্বাস?
সেই বঞ্চিত অনাগতের আবির্ভাব সম্ভাবনাতেই
আজকের ধরিত্রী কি বেদনা মূমুর্ষু?
যার ধ্যানে এবং ধারণায় গৌতম শাক্যসিংহ
হয়েছিলেন রূপান্তরিত অমিতাভ বুদ্ধে
আজও জন্মায় নি যে মহত্তর বৃত্তিশালী মানব শ্রেণি
এখনও আসে নি সত্যকার অকৃত্রিম সভ্যতা
স্বপ্ন কল্পনায়ও যা আজকের এই
হিংস্র পৃথিবীর অতি অসম্ভব
স্থিতধী ঋষি যারা, দৃষ্টি যাদের সুদূর প্রসারী
তারা পেয়েছেন কি এই  নবযুগের আভাস?


ঐকান্তিক বিশ্বাসে ভাবতে ভালো লাগে
মহাকালের মহানচক্রে আসবে-
আসবেই সে অনাগত
আজকের আগতের যা সম্পূর্ণ বিপরীত
সুতরাং অপূর্ব এবং অভিনব
যা কখনোই আসে নি এই পৃথিবীর বুকে
যা সত্য হয়ে ওঠেনি মানব সভ্যতায়
আজও সার্থক হয়নি যা বহু সাধকের আমরণ সাধনায়
সেই অনাগত নবমনোবৃত্তিশালী
উন্নত মনুষ্যজাতির
অকৃত্রিম শুভ সভ্যতার অভ্যূদয়ে
নবজন্ম পরিগ্রহ করুক এই
জীর্ণ প্রাচীন পৃথিবী ।।


ফণীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ভারতবর্ষ  পত্রিকার কার্তিক ১৩৪৭ (নভেম্বর, ১৯৪০) সংখ্যায় প্রকাশিত