ক্লাস ফোরে উঠতে না উঠতেই, ব্যাস্!
শুরু হতো আদাজল খেয়ে ধস্তাধস্তি
নাকের ডগায় বৃত্তি এসে ডাক পাড়ছে।
আশেপাশের ছটা স্কুলে তুমুল লড়াই।
টিচাররা সব এগিয়ে এসে সারি বেঁধেই,
নিয়ে যেতো পরীক্ষায় বসতে হবে বলে।
ছেলেবেলার রঙিন সেসব দিনগুলোয়
পরীক্ষা চুলোয় যাক, সেটাও চাটনি...


ফাইভে উঠে প্রাইমারি স্কুল ভো..কাট্টা,
নতুন বই, নতুন ক্লাস আর নতুন স্কুলও,
বৃত্তি পাওয়া সার্টিফিকেট নেবার সময়ে,
মাস্টারমশাই যখন মাথায় হাত রেখে
আশীর্বাদ করতো, ভাবতাম সামনের
বসা ছেলেগুলোর থে‌কে আমি বিশেষ,
আনন্দ আর কষ্ট যেন একই কামরায়,
তবু যেতেই হবে ...সামনে অনেক পথ।


স্বামীজীর ভাগ্নে একটা স্কুল গড়েছিল,
রামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যাপীঠ, কিছু আদর্শ!
হেডস্যার ছিলেন কবি শেখ সদরউদ্দিন,
গরমকালে আমবাগানে গাছতলায় পড়া,
আম পড়লেই চলতো দারুণ হুড়োহুড়ি,
আড়ালে থেকে কিছু সায়...হয়তোবা..
টিকলো না তাও, স্কুল বদল ক্লাস এইট,
বাবার বদলি চাকরি হলে, সেটাই হয়...


এরপর আমিও বদলি চাকুরির শিকার...
গ্রামের টানে আবার বাড়ি কিনে ফিরেছি,
পাঁচটা দশকও পার হয়ে গেছে তদ্দিনে,
বহুজল গড়িয়েছে মায়াভরা গঙ্গার কূলে,
কাল একুশে, ভাষাদিবস ওপার বাংলায়।
হটাৎই একটা পুরোনো বন্ধুকে দেখলাম।
ওরা নাকি ভালো অনুষ্ঠান করে এখানে।
আমাকেও যেতে বললো বেশ কয়েকবার।


কথায় কথায় পুরোনো কথা ঘুরেফিরে,
এখানে ইংরেজিতে পড়ার স্কুলও রয়েছে,  
ওর নাতিনাতনীরা পড়ে। ওকে বললাম,
"আমাদের সেই স্কুলের খবরাখবর কী..."
"ধুৎ!  প্রাইমারি স্কুল তো আগেই লাটে...
আশ্রমও ছেলেমেয়ের অভাবে দিশেহারা"
স্তব্ধ হই। কত্ত সহজে শেল বিঁধিয়ে দিলো।
"শোন! কাজ আছে,সভায় যাওয়া হবে না"


হয়তো নিজেকেই জানালাম তীব্র ধিক্কার,
শুধুই নিজেকে দেখেছি! নিজের উন্নতি!
কিছুই কি ছিলো না করবার, কিছুই কি...


লেলিহান আগুনে চারদিকে ভাষার কান্না।