নিঃশব্দ রাত, ঝিঁঝিঁর ডাকাডাকি।
রাতের বুকে চিরে
হঠাৎ সাঁই করে ছুটে যায় দু'একটা গাড়ি।
আকাশটা সাজানো তারার মেলায়,
সাথে পূর্ণিমা চাঁদের অনুপম রূপশ্রী
জোছনার জলকেলিতে মাখে প্রকৃতি।


আর আমি বিছানায় শুয়ে অধীর অপেক্ষায়-
একটি ফোন কল।
হ্যালো!
শুরু হয় আলাপন।
কিছুটা সময় পেরোয়
এরপর বিদায় বেলা।
শাসন, বারণ আর পরদিনকার শুভকামনা।
এভাবেই শুরু হয় জীবনে চলার প্রভাতবেলা।


উষ্ণ ভালোবাসায় খুঁজে পাই জীবনের বাস্তবতা।
খুঁজে পাই আমার আমিকে,
যে স্বত্বায় ভর করে জেগে ওঠে
হৃদয় সাগরে ভালোবাসার উত্তাল ঢেউ।
জোৎস্নাস্নাত রাত পার হয় ভোরের অপেক্ষায়।
জীবন-জীবিকার তাগিদে ছুটে চলি আমি,
তুমি রও মোর পাশে ছায়া হয়ে।
অফিসে যাওয়ার তাগিদ,
মোবাইল-মানিব্যাগ-ল্যাপটপ-আইডি
কোনটাই বাদ পড়ে না তোমার নজরে।


ভোরবিহনে নাস্তার টেবিলে বসা হয়না আমার।
আলসে আমার ঘুমের জোয়ার
কাটতেই সূর্য তেজ ছড়ায়।
ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি।
এটা কই, সেটা কই
হাজারো প্রশ্নবাণ তোমার তরে।
অফিসের গাড়ি চলে আসে
উঠে পড়ি গাড়িতে।
দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তুমি হাত নাড়
চাপা হাসিটা লেগে থাকে ঠোঁটের এক কোণে।


দুপুরের খাবারটা তৈরি হয়েছে
সেই কাকডাকা ভোরে।
টিফিন ক্যারিয়ারটা খুলতেই
ভরে যায় সহকর্মীদের প্রশংসা।
রিং বেজে ওঠে মুঠোফোনে
হ্যালো!  
তুমি কি দুপুরের খাবারটা সেরেছ?      
হ্যাঁ, বলতেই আনন্দ হিল্লোল বয়ে যায়
তোমার হৃদয়স্পটে।


সোনালী বিকেলটা অপেক্ষা করে
ধোঁয়া ওঠা গরম কফি আড্ডার।
দক্ষিণের বারান্দায় বসে তুমি
আমার ফেরার অপেক্ষায়।
অস্তগামী সূর্য সোনালী আলো ছড়ায়
তোমার কেশলহরীতে।
জমে ওঠে আড্ডা কফির চুমুকে।


সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে-
মেহরীনের ডাক তোমার ব্যস্ততা বাড়ায়।
খেলা শেষে ফিরেছে সে।
সন্ধ্যা নাস্তার পর্ব শেষে এবার পড়ার আয়োজন।
রীতিমত বই নিয়ে বসেছে মেহরীন
টেবিলের এক পাশটা খালি আমার জন্য,
বাবাই তার প্রিয় শিক্ষক।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে পদচারণা,
পুরষ্কার আর অর্জনগুলো উৎসর্গ করেছে
বাবা-মাকে।


ন'টার ঘন্টা জানান দেয় বিনোদন বেলার।
কখনো মুভি, কখনোবা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
জোৎস্নার জলে জলকেলি।
কিংবা রাতের ঢাকায় ফাঁকা রাস্তায়
লং ড্রাইভে ছুটে চলা।
ক্ষণে ক্ষণে মেহরীনের
বাবা এটা কি? ওটা কি
জিজ্ঞাসুমনের প্রশ্নভান্ডার।


ততক্ষণে ঘুমের রাজ্যে কারো আগমন ঘটে
তার আগমনী বার্তায় সাড়া দিয়ে আসে
স্বপ্নরাজ্যে ঘুম।
রূপকথা, রাজকুমার, নীলপরীর গল্প শুনে
মেহরীন ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে।
ওর অসুস্থতা তোমায় ব্যথাতুর করে তোলে,
শিয়রে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা খোদার রাহে।


জানো-
আজ তোমার মেহরীন অনেক বড় হয়েছে
আদো বোল বলা সেই মেয়েটি
আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত।
আমি আর সেই আলসেটি নেই।
মেয়েটা একেবারে তোমার মত হয়েছে।


জানি! তুমি সবই জানো।
দেয়ালে টানানো ছবিটা
বারবার নিয়ে যায় পুরনো সে দিনে।
হাতড়ে বেড়াই স্মৃতিগুলো ঊর্ণাজালের ভিড়ে।
যখন শম্ভিত ফিরে আসে
পেছন ফিরে দেখি
মেহরীন ডাকে-" বাবা"।