ক্ষণজন্মা মানব কহিল ঈশ্বরে, "হে নাথ!
যদি কিছু ভুল করি, ক্ষমা করিও অপরাধ।
তুমিই আদি, তুমিই অসীম, তুমিই অন্ত-
তুমিই সাগরের নীলিমা, গোধূলীর দিগন্ত।
তুমিই জন্ম, তুমিই শ্মশানের লাল চিতা
আজি দুর্দিনে তুমি কোথায়, হে বিশ্বপিতা?"


"আমি তো রয়েছি তোমাদের সত্তার মাঝে
আমি তো রয়েছি ঊষার গগনে, প্রতিটি সাঁঝে-
সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলে, নিজ বাসায় ফেরে বিহঙ্গ
রাতের পসরা সাজিয়ে বসে জীবনের চতুরঙ্গ,
নিঝুম আকাশে নিভৃতে যখন তারারা চেয়ে রয়
মেঘের ফাঁকে খুঁজিলে আমায় পাইবে নিশ্চয়।
মহাজীবনের মাঝে আমি অতন্দ্র, অবিনশ্বর-
দু'চোখ বুজিয়া দেখো খুঁজিয়া", কহিল ঈশ্বর।


"কিন্তু তোমার আদেশে নামে বজ্র, নামে বৃষ্টি
এই রুপ-রস-গন্ধ সব তো তোমারই সৃষ্টি,
ব্রাহ্মকালে দূর গগনে দেখি যে সিঁদুরে লাল
সে তো তোমারই অনুদান; হে মহাকাল-
চারিদিকে হিংস্রতা, হিংসা, দ্বেষ আর দ্বন্দ্ব
অবিশ্বাসের আখরে লেখা বিষাদের বাহুবন্ধ;
কে দেবে আলো? চারিদিকে অসভ্যতার বিষ
মানবের দেহ-মানস পুড়ায়ে খাচ্ছে অহর্নিশ।
তুমি রয়েছো জানি; তবুও সজীব কৌতুহল-
কে আকন্ঠ পান করিবে হিংসার এ হলাহল?
এ বিশ্ব তোমার গড়া, হে নাথ, জগত্পালক!
কি হইবে এই দুর্দিনে? হে সভ্যতার চালক!"


ঈশ্বর কহিল ধীরে, "তুমি যা চাও হইবে তাই
তবে, তদপূর্বে আমার প্রশ্নের উত্তর চাই-
এটা কি বলিতে পারো?"-নীল-সবুজ গোলক
মানবকে দিলেন তিনি; কিন্তু মানব অপলক-
দৃষ্টিতে ভাবিয়া অবশেষে ফেলিল দীর্ঘশ্বাস।
ঈশ্বর কহিল তখন, "এ আমার অভিলাষ-
ছিল এক ক্ষণে; এ তো তোমাদেরই আপন ধরা
আমার শিরায়, আমার নিজ হাতের আঙ্গুলে গড়া;
চিনিতে পারিলে না, কারণ এখানে নেই দেশ
নেই হিংসা, ভয়, হীনমন্যতার কোনো বিদ্বেষ,
তোমাদের নিজ বিশ্ব তো গড়িয়াছ তোমরাই-
মারণাস্ত্র হানিয়াছো, আঘাত করিয়াছো অযথাই
বিষাদের আগুনে জ্বলন্ত এ পৃথিবী আমার নয়
এ পদস্খলন তোমাদের নীতিবাদের অপচয়;
এ পৃথিবী নিদর্শন তোমাদের মলিন সভ্যতার
তোমরাই গড়িয়াছ প্রাচীর, বিছায়েছ কাঁটাতার।।"