চলে উন্মাদ গাহি–
এ শরীরে তার ছেঁড়া জামা ছাড়া ভিন্ন দোসর নাহি।
শরীর ভরিয়া মূত্রের জল, কেহ নাই মুছাবার;
দু’ঠোঁট ভরিয়া পাগলাটে কথা, কেহ নাই শুনিবার।
চলে উন্মাদ ফুটপাতে করি নিজের সঙ্গে খেলা;
ছেঁড়া জামা নিয়া ব্যতিব্যস্ত সে থাকিত সারাটা বেলা।
দু’ধারে দালান মাঝখানে কালো পিচঢালা রোড চাপি;
যাহার উপরে নানান রঙের গাড়ি করে দাপাদাপি।
নাচে উলঙ্গ হয়ে, উন্মাদ গায়ের বসন ছিঁড়ে;
ফুঁ দিয়ে ফুঁ দিয়ে ময়লা ওড়ায় গিয়ে জনতার ভিড়ে।
দূর পানে চাহি হাঁকে উন্মাদ, আয় আয় আয় আয়;
কম্পন জাগে জনতার ভিড়ে কলরব হায় হায়।
তারই তালে তালে দুলে দুলে ওঠে পাগলাটে সব কথা;
হেলে উন্মাদ খোলার আশায় দু’পায়ের বেড়ি-লতা।
চলে উন্মাদ দালানকোঠার বহর দিয়াও পাড়ি;
উন্মাদনার শত অধ্যায় দেখাবে বক্ষ ফাড়ি।
নামে দুই কাঁধে জটলা লম্বা এলোকেশ যেন রাতি;
গলায় তাহার ছেঁড়া জুতা আর হাতে কটা ভাঙা বাতি।
একাকী খাঁড়ায় পাগল বনিয়া নাচে সে ভয়ঙ্করী;
দূর অতীতের নিহত মনের ছিন্নমুণ্ড ধরি।
দেখে না চাহিয়া পাগলের সাজ দু’নয়ন কেহ মেলি;
ধরেও না তারে দু’হাত পাতিয়া ধুলোবালি, দ্বেষ ঠেলি।
চলেছে পাগল চলেছে সে তার উন্মাদনার পথে;
পাগলামো তার সাথে সাথে চলে দেহের ইন্দ্ররথে।
পথে পথে চলে নিজে কথা বলে মাঝে মাঝে দেয় হাঁক;
ডাস্টবিনে বসি আহার খুঁজিছে একজোড়া দাঁড়কাক।
গৃহকোণে বসি মাথা কুঁটে কাঁদে পাগলের নিজ মাতা;
চলেছে পাগল আপনার মনে বকিয়া বকিয়া যা-তা।


চলেছে পাগল– চলেছে পাগল– বহুদূর বহুদূর;
উদাসিত মনে গেয়ে যায় যেন পাগলাটে সব সুর।
প্রেমিকা হারায়ে কাঁদিয়া সেদিন হয়েছিল দেবদাস;
আস্তে আস্তে সেখান হতেই উদ্ভটে উল্লাস।
ছিঁড়িতে লাগিল আপন বসন যেন তারপর হতে;
এরপরে সে যে পাগল হইবে কে জানিত কার মতে?


চলেছে পাগল চলেছে সে তার প্রেমিকার নাম স্মরি;
সীমারেখাহীন গাড়ি চলা কালো পিচঢালা রোড ধরি।
কোমল-মিষ্টি সুরের বদলে কর্কশ স্বর গলে;
কতবার গেল আপনারে ভুলি মরিতে গাড়ির তলে।
গাড়ির হরন বাজিয়া বাজিয়া জীবন দিছিল ঢালি;
কত সতর্ক করেছিল তারে সামনের লাইট জ্বালি।
অবশেষে সেই গাড়ির চালক গাড়ির দুয়ার খুলি;
ধাক্কা দিয়াই সরায়ে দিয়াছে গালাগাল মুখে তুলি।
পড়িয়া পাগল রহিয়া রহিয়া করিছে আর্তনাদ;
এ যেন ধরার জীবন চলার একটাই মতবাদ।


রে পাগল! তুই মরবি তো? ভালো, কিন্তু এমন করে-
আমারে ফাঁসাইয়া মরিস কেন রে? মর্ গিয়া নিজ ঘরে!
কোনো কালে তোর করেছি কি ক্ষতি? বল্ না তুই আমারে!
তবে কেন চাস, থানা-আদালত দৌড়াবি বারে বারে?
পুলিশ বাবুর পকেট ভরাতে ছেড়ে দিল তোরে গিনী!
এমন অনেক ইস্যুর খেলা দেখিতেছি প্রতিদিনই।


চলে উন্মাদ আপনার পথে কোনোদিকে নাহি চায়;
ঐ রাজপথে থাকিয়া থাকিয়া গাড়ির হরন বায়।
শত পাগলের শত অপমান সকলই দেখিছে তাহা–
দু’ধারের সেই দালানকোঠাও বলিল না, উঁহু আহা।
চলিছে পাগল– চলিবে পাগল কতকাল কতকাল;
রে পাগল বল্ আর কতকাল ছিঁড়িবি মায়ার জাল।
যে প্রিয়ার তরে ঘটিতে চলিছে জীবনের যবনিকা;
সে আজ পরিল আপন ললাটে পরের প্রণয় টীকা।
চলেছে পাগল চলেছে সে তার জন্মস্মৃতির পারে;
পৃথিবীর সব পাগলেরা আজ যেন তার কাছে হারে।
চলেছে পাগল স্বপ্ন ফেলিয়া মৃত্যুর মতো ধীরে;
হাহাকার আর সকল হতাশা রহিছে তাহারে ঘিরে।
জীবন-মৃত্যু গ্রাসিয়াছে তাই চারিদিকে আন্ধার;
শেষ কবে হবে অবিরাম পথ জানা নাই কিছু তার।