কে তুমি, যে নীরবতার আঁচলে
জড়ালে অনাহূত অতিথির মতো,
নক্ষত্রের রাজপথ ভেঙে আমার প্রহরে এলে—
জানি না ঠিক কী নামে ডাকি তোমারে।

নয়ন রেখেছি খোলা শারদ-আকাশে,
তুমি সেখানে কি পাতার জোনাকি হয়ে জ্বলে উঠেছিলে?
প্রতিটি মাধবী রাত ছিল এক শব্দহীন আহ্বান,
যেখানে বাতাসে খুঁজেছি তোমার গানের ছায়া।

তুমি যে এসেছো কি-না,
তা আমি বলিতে পারি না স্পষ্ট ভাষায়—
কিন্তু হৃদয়ের অন্তঃপুরে এক চেনা অপরিচয়
ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যায় বেদনামাখা দীপ্ততায়।

সুরের গভীরে কোনো এক পরিচিত অস্পষ্টতা,
মনে করিয়ে দেয় তুমি হয়তো কোনো কালে শুনেছো আমার গান।
বহু জন্মের স্মৃতি মেখে
তুমি হয়তো এসেছো স্নিগ্ধ চরণে অচিন দেশের পথ পেরিয়ে।

তুমি সেদিন সন্ধ্যার কণ্ঠে ছিলে—
চুপিসারে নেমেছিলে ঘুঙুরের শব্দে,
আমি দোয়াতের কালি করে নিজের বুক
চুপিচুপি তোমার নামে একটি কবিতা লিখেছিলাম।

তুমি কোথাও থেকে যাবে কি?
না কি এলে শুধু একবার খেয়াল রেখে চলে যাওয়ার মতো?
তোমার ছায়া পিছু হটে,
কিন্তু গন্ধটা থাকে মুগ্ধ অশোকের পল্লব ঘেঁষে।

আমি তো পৃথিবীর পথে অনেকদিন হেঁটেছি,
অনেক মুখ, অনেক ভাষা, অনেক চোখে দেখেছি বিস্ময়—
তবু, যে চাহনি হৃদয়ের আলয়ে
একবার ঝলক দিয়ে হারিয়ে যায়— সে শুধু তোমার।

তুমি কি সত্যিই ছিলে?
নাকি আমার হৃদয়েই তোমাকে আমি আঁকিয়েছিলাম—
এক অপরূপ ভ্রমণকথা,
যেখানে নাবিক ছিলাম আমি, আর পথ ছিলে তুমি?

তুমি থেকো না থেকো,
তোমার অনুপস্থিতিই আমার সত্তার সবচেয়ে বড়ো উপস্থিতি।
তুমি এসে যাওনি,
তাই তো তোমার প্রতীক্ষায় জীবনের সকল সুর বাঁধা পড়ে রয়ে গেছে।

আমি অতিথি হয়েই এসেছি—
তোমার দ্বারে, তোমার নাম না জেনে, পরিচয় না পেয়ে।
তোমার অভ্যর্থনায় নয়,
তোমার নীরব সম্মতির আশায় সঁপে দিয়েছি আত্মার সুরধ্বনি।

তুমি যদি চলে যাও—
এই কবিতা রয়ে যাবে,
শুধু তুমি জানবে না,
এই পঙ্‌ক্তিগুলো কেবল তোমারই কথা বলে।