প্রান্তর রেখায় সন্ধ্যা মিশে গেলে,
তুমি কি শুনেছিলে অনুচ্চারিত ভাষা?
ছায়ার আড়ালে সেদিন যে নিঃশব্দে
আমার স্পর্শ ফেরাল মৃদুমৃদু বাতাসে।

বিষণ্নতা নয়, তবু আনন্দও নয়—
এক অদ্ভুত আত্মবিস্মৃত বিস্ময়ে
চেয়ে ছিলাম তোমার অপসৃত চরণের দিকে।
সেখানে কেউ নেই, ছিল শুধু এক শূন্য সঞ্চয়।

শব্দহীনতা হয়তো ছিল না-দেখার প্রতিশ্রুতি,
তবু হৃদয়ের প্রাচীন গহ্বরে জমা ছিল অঙ্গীকার—
একদিন ফিরে আসবে তুমি,
অন্তত মুছে দেবে চোখের এই অস্থির আঁচড়।

পৃথিবীর সকল পথ যেন আজ সংকুচিত—
ঘন ছায়ার মতন ঢেকে দেয় সম্ভাবনার শিখা,
তবু তব অনুপস্থিতির অগোচরে
প্রতীক্ষা রেখেছি একান্তে, নিষ্কম্প, নিরালোক।

তুমি কি জানো, প্রতিদিন কেমনভাবে
ঘুমের মাঝে শুনি তোমার ক্লান্তি-নিঃশ্বাস?
অস্ফুটে বলে ওঠো যেন, "আজ নয়... তবে কাল হয়তো..."
আমি সেই ‘হয়তো’কে বুকে নিয়ে নিই নিঃশ্বাস।

জানালার কাচে জমা শিশিরের মত
অসংখ্য না-করা কথার জলছবি আঁকি—
তুমি এসে কি দেখে যাবে কখনও
এই হৃদয়ের নিবন্ধ শ্রুতি-রেখা, এই অপ্রকাশিত ঝাঁপি?

যুগল তারার মত ভেসে থাকা সেই চাহনি—
আজও বিভ্রমে রাখে বুকের গহনে।
তবু নিজেই জানি, প্রশ্ন নেই উত্তর–
নিরুত্তরতারও যে থাকে নিজস্ব কাব্যভাষা।

তুমি আসবে না, জানি—
তবু ফিরি, আবারও, সেই চিরচেনা প্রতীক্ষায়।
কারণ প্রত্যাবর্তন নয়,
স্মৃতির বিভা দিয়েই তো আমরা বাঁধি অনন্তের ছায়া।

আমার এই অর্ঘ্যহীন জীবনের গন্ধবহা বেদনা—
তোমার এক পলকের স্মৃতিতে শুদ্ধি পায়।
তাই চলে যেও তুমি যতদূর—
আমার প্রতীক্ষা এক অদৃশ্য দীপ্তি হয়ে চিরকাল জ্বলে থাকুক—
চোখ না তুলে, কথা না বলে, শুধুই মনে মনে।