বাবু, আমি শেখাবত খাঁ,
এক রিক্সাওলা আছি বটে,
তুকে বাবু রোজ ইস্কুলে লিয়ে যেতি,
চিনতে কি পারোনি বাবু -
আমি সেই রিক্সাওলা !


কতদিন তোদের ঘরে, মাল বয়েছি বাবু,
বাজার থেক্যা - আলু, পটল, মাছ, মাংস,
চাল, ডাল, তেল, নুন, আরো কতকি।
বাবু, তোমার মা ছিল বটে, এক সাক্ষাত
লক্ষ্মীদেবী, আমাদের মুড়ি খাইয়ে ছাইরত,
সক্কাল থাইক্যা কুচ্ছু না খাইলে,
মুখটা শুকা শুকা লাইগত,
মা জননী, আমাদের না খাইয়ে
ককখনো ছাইরত নি বাবু।
মুখ দেখ্যা সব জানত্যা পারত।


তুমি, সেই ছোট্ট বাবুটি আজ কত্ত বড় ডাক্তর,
দেখ্যা আনন্দ হইল মনে,
তুমি ভালো থাক্য আর বড় হও,
আল্লাতালা ভালো রাখুক তুমাকে, বাবু।              

আমার রহমতের আম্মি,
আজ একমাস জ্বরে ভুগছ্যা,
পথ্য দিবার পইস্যা নাই।  
বয়স হইল আশি, রক্ত উঠ্যা, লাগাতার কাশি।
জমিন সব নদীর পাড়ে, চল্যা গ্যাছে
বাঁধ দিতে, এক ছটাক ও নাই ঘরের জীন্যে,
সরকার থেক্যা কোনো আশা নাই,
আধার কার্ড আর ভোটার কার্ড ও নাই।
কি করব বাবু, বাঁচ্যা আছি যতক্ষণ,
লড়তে হবে ততক্ষণ।


        
বিলাত ফেরত ডাক্তার,
বিশ বছর আগের কথা গেছেন ভুলে;
শহরে বিশাল নার্সিংহোম এন্ড
ডায়গনস্টিক সেন্টার, রমরমা বাজার।  
বেড তো খালি নেই, পাঁচশত টাকা জমা দিয়ে
রিসেপশনে টোকেন নিও, ডাক্তার, শেখাবতকে বলে।
শেখাবত ভাবে, পাঁচশত টাকা !
অত টাকা রইলে, ঘরের চালে,
বাঁশখড়টা দিতুম, তাহিল্যে,
রোদে জলে তো জ্বরটা হইত্য নি।
শুনবে কে, এ কথা কই কারে !


সত্তর বচ্ছর ধইরিয়া, রিক্সা চালাইলাম,
কত মানুষ আর কত মাল বইলাম,
শেখিনা, মর্জিনা ও রহমতকে বড় করাইলাম,
শাদীতে অত খরচ হয় নাই,এ জীবন পুরা রিক্সা টানিলাম,
আজ বিবিকে বিনা ডাক্তর মারিলাম।
হে আল্লা, পরজন্মে আমারে ডাক্তর বানাইও!