চারিদিকে হুলস্থুল, মানুষের চিত্কার - চেঁচামিচি,  
ডুবে গিয়েছিলাম পুকুরে, তোমার এই আদরের কচি।
লোকে বলে, তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে - আমায় দেখে,
তোমার কেঁদে ভাসানোটা, এখনো মনে রেখেছে লোকে।
  
আমরা ভাইবোনেরা অনেক, মানে ছয় জন, কম কি!
দুই দিদি, এক দাদা, এক ভাই, এক বোন্ আর কি।
মিলেমিশে থাকা আর মারামারি করে খেলা,
এই করে কাটতো আমাদের ছোট বেলা।


যখন জলে পড়ে যাই তখন হয়নি আমার ছোট ভাই আর বোন্,
দুই দিদি আর দাদা আমায় আগলে রাখতো, খেলতাম যতক্ষণ।
সবার অলক্ষ্যে আমি চলে গিয়েছিলাম পুকুর ঘাটে,
তুমি তখন ছিলে না ঘরে, গরুকে জল খাওয়াতে গেছো মাঠে।  


বয়স আমার মাত্র সাত-আট মাস, সবে শিখছি হামাগুড়ি,
সবাই তখন খেলায় মত্ত, বড়দিদির হাতে ছিল ছড়ি।
ছোটা ছুটি আর খেলে,  ঘেমে ঘেমে নেয়ে - বিশ্রামে তারা রত,
আমি যে কোথায়, কেউ না রেখেছে মনে, মগ্ন খেলায় মস্ত।


তোমার ডাকে ছুটে এলো দিদিরা আর দাদা, সবাই যে যেখানে ছিল,
কচি কোথায় ! তোমার চোখ রাঙানিতে, ভয়েতে কেউ না রা কাড়িল।
খোঁজাখুজি ছোটাছুটি আর হলো হাঁকডাক চারিদিকে,
জিজ্ঞাসা করে একে তাকে, সব্বাইকে, আসে যে সম্মুখে।


পাড়ার লোকেরা জড়ো হয়ে, করে খোঁজা খুঁজি, বিকেলে হাটের দিনে,
জলেতে হায়! ওই দেখা যায়, ভেসে আছে কিছু একটা, কারুর পড়ল মনে।  
রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে শতাধিক লোক জমাট বেঁধেছে যখন,
কেঁদে কেঁদে পাগলিনী মা আমার, শুনে মূর্ছা লাগিল তখন।  


আসে পাশে গ্রাম দশে - ছিলনা কোনো ডাক্তার,
ঢেঁকির উপর রাখো, বলে বিজ্ঞজন;
নয়তো পরামর্শ দেন - মাথায় বসিয়ে নাচার,
অনেকজনের অনেক প্রচেষ্টায়, আমি হলাম কাঁদতে সক্ষম,
কয়েক ঘন্টা পরে, তুমিও জাগিলে, ভেঙ্গে কয়েক ঘন্টার অজ্ঞান।


গ্রামবাসী, ওড়শি-পড়শী, সবাই এলো, সান্ত্বনা দিলো তোমাকে,
জল দিয়ে মাথায়, মাসি পিসি যত, সেবা যত্ন করিল মাকে।
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে চারিদিকে, পরে মায়ের মনে পড়ে সব,
বাবা ছিলনা ঘরে, ছিল দূরদেশে, আসায় হলো এক উত্সব।


বড় হয়ে কৈশোরে, ছোটবেলার কথা শুনে, ভাবি মনে মনে,
প্রতিজ্ঞা করি - কষ্ট আমি দেবো না মাকে কোনো দিনে।
আজ বড় হয়েছি আমি - মনে পড়ে সেইসব কথা,
'তুমিতো নেই, অশ্রু ঝরে আজ, ক্ষমা করো মা -
দিয়েছি কষ্ট কত আর বুকে ব্যথা।


##
গত পাঁচ বছর পূর্বে ঠিক এমনি দিনে (সেদিন ছিল মহরম ইং ১৭/১২/২০১০) আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন অনন্তলোকে। তাঁর স্মৃতিতে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করি।