গাঁয়ে ছিল এক চাষী,
থাকত সে সব সময় খুশি।
তামাটে রঙের দুটো গরু ছিল তার,
আর বলতো, দুই বিঘে জমি আছে আমার।
মনে ছিলনা কোনো চিন্তা, না আশংকা,
তিনফসলী চাষ করবে একদিন-
এটাই তার আশা আর আকাঙ্ক্ষা।


খড়ের চালে চাঁদ দেখতো সারা বছর ধরে,
বর্ষার দিনে ত্রিপল দিয়ে চাঁদ ঢাকতো ঘরে।
শীত-গরমে আঁধার রাতে, সে তারা দেখতো শুয়ে,
সুখে আছি আরামে আছি - বলতো সবাইকে চেঁচিয়ে।


নানা রকম ফসল ফলিয়ে, নিয়ে যেতো সে হাটে,
ফেরার পথে বনে যেতো -অসুস্থদের বিনে পয়সার মুটে।
এমনি করে ভালোবাসতো সবাই তার কর্ম আর গুণে,
আরো কত কাজ করবে সমাজের - ভাবতো শুধু মনে।


গত বছর বর্ষায় - বিদঘুটে এক হলো রোগ,
বিক্রি হলো যা ছিল বাড়িতে - ছাগল আর মোরগ।
রোগ তো সারেনা তার - ডাক্তার আর পথ্য ও নাই,
দুরে সরে গেল সকলে - যারা ছিল তার গুণের ভাই।

দেনা হলো তার কয়েক হাজার - মহাজনের কাছে,
লিখিয়ে নিল জমিটা তার - না যদি করে ঋণশোধ পাছে।
আত্মীয় স্বজন চলে গেল দূরে, কেউ খোঁজ নিলোনা একবার,
চারদিনে ভুলে গেল তাকে, যে ছিল ক'দিন আগে প্রিয় চাষী সবার।


হাসি খুশি সে চাষী, শরীরটা যার ছিল হাট্টাগোট্টা,
রোগা হয়ে কি করে, ভবের সংসারে -
দুই দিনে হয়ে যায় তিতা আর খাট্টা।
কবি গুরুর কথা কি হাড়ে হাড়ে ফলে গেল - মনে দিল সুড়সুড়ি -
"এ জগতে হায় সেই বেশি চায় - যার আছে ভুরি ভুরি,
রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি"।


সত্যি সত্যি ফলে গেল -
মৃত্যুর দুদিন পরে ঘটনাটা হলো।
মহাজন এলো - জমিতে ঝান্ডা পুঁতে দিল,
পার্টির ছেলেরা চাঁদা তুলে - খাওয়ার আয়োজন ভালো করলো।
মহান আত্মা তৃপ্তি পাক !
দূর! তোর্ কাগুজে সম্মান চুলোয় যাক !!!