আলোচনা  ১৭৯


কবি আলী আমজাদ আল আজাদ এর লেখা কবিতা “জয় –পরাজয়”তে, বিপরীতমুখী শব্দের ব্যবহার, যা কবিতার আলোচ্য বিষয়। এ রকম আরো কিছু শব্দ যেমন- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদন, লাভ-ক্ষতি, ইচ্ছে-অনিচ্ছে, ভালো-মন্দ, হার-জিত, উপকার-অপকার ইত্যাদি যেগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের চিন্তা মননে, আমাদের জীবনে নানা ভাবে প্রভাব ফেলে। এক্টূ সচেতন হতে পারলে, প্রভাব কম পরে কিন্তু খুব বেশী অসচেতন হলে পরে, জীবনের উপর অনেক বেশী প্রভাব পরে, অনেক সময় ঋণাত্মক  প্রভাব দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পরি। মুলত শব্দ গুলোর উপর আমাদের বোঝাপরা কম থাকে, শব্দ গুলোর উপর নিয়ন্ত্রন কম থাকে এবং স্পষ্ট ধারনা কম থাকার কারনেই এমনটা ঘটে থাকে।


শব্দ দুটিকে কেন্দ্র করে কিছু প্রশ্ন সামনে রেখে, আলোচনা এগিয়ে যাই-


১। জয়-পরাজয়, এর মাপুনি/সূচক কি? সূচক কি সার্বজনীন? নাকি প্রেক্ষিত নির্ভর?
২। প্রকৃতির নীতিমালা কি ক্রমাগতই ঘটবে একটি কিংবা অন্যটি?
৩। জয় –পরাজয় কি কোন একটি বিষয় নির্ভর? এটা স্বল্পস্থায়ী নাকি দীর্ঘস্থায়ী কোন বিষয়?


প্রশ্ন তিনটির উত্তরে লুকিয়ে আছে , আমাদের তথাকথিত ভুল ভাবনা, ধারনা , এর কারনেই একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং পরিনতির ঋণাত্মক ফলাফল।


জয়-পরাজয়ের তো কোন সার্জনীন মাপুনি নেই, কেউ জীবনের জয়কে বিবেচনা করে অর্থ বিত্তের মাধ্যমে, কেউ শিক্ষা কেউ মর্যদা ইত্যাদি। কেউ ক্লাশে খুব ভালো রেজাল্ট করে জয়ী হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসে কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় পরাজিত হয়, আবার ক্লাশের লাষ্ট বেঞ্ছার জীবনের পরীক্ষায় জয়ী হয়। ফলে জয়-পরাজয় নির্ভর করে, নির্দিষ্ট ইস্যু, সময়, পরিস্থিতি ইত্যাদি। বারাক ওবামা ৫২ বছরে বয়সে রিটার্ড করেছেন আবার বাইডেন ৫৫ বছর বয়সে শুরু করেছেন।


আজকের জয়, কালকের পরাজয় হতে পারে। এমন উদাহরন কি নেই, কোন একজন, শিক্ষা, ক্যারিয়ার, অর্থে বিত্তে, সম্পদে, মান মর্যাদায় সব দিক থেকেই জীবনে শুধু জয় আর জয় কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনে শুধু একটি সন্তানের অভাবে, সমস্ত জয়ের সুখ পরাজয়ের দুঃখে ভারাক্রান হয়ে গেছে।


আমরা বিভিন্ন মনিষীদের বানী, সফল ব্যক্তিদের বক্তব্য, চীনা দর্শন, বিভিন্ন ধর্মের দর্শনে ইত্যাদি থেকে জানতে পারি, বিপরীতমুখী এ শব্দ যুগল্গুলো জীবনেরই অংশ। প্রত্যেকের জীবনেই বিপরীতমুখী শব্দদ্বয়ের সংমিশন থাকে, তার আনুপাতিক হারে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু অবশ্যম্ভাবী ভাবেই থাকবেই।


কবি আলোচ্য কবিতায় সেই চিরাচরিত দর্শন আবার নুতন করে বলেছেন, যেমন-


যুদ্ধ করে বাঁচার নামে বাঁচাটাই তো জীবন
থেমে যাবে যখন তুমি আসবে তখন মরণ ।


কিংবা


জয়-পরাজয় অংশ জীবন এমন বেঁচে থাকা
হারকে দিয়ে জয়ের মালা গর্ব ধরে রাখা ।


কবির জন্য রইলো প্রীতি ও শুভেচ্ছা