আলোচনা ১১০


সমসাময়িক বাস্তবতায় মুখে মুখে প্রচলিত এবং আতঙ্কিত প্রত্যয় ‘ক্ষমতা’ নিয়ে লিখেছেন কবি নূর ইমাম শেখ বাবু এবং শিরোনাম দিয়েছেন ‘ক্ষমতার ব্যধি’। ক্ষমতা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে বাংলাদেশে, কেন এবং কিভাবে একজন বা একাধিক মানুষ কিংবা গোষ্ঠী ক্ষমতাবান হয়ে উঠে। ছাত্রবস্থায় আমার একটি থিসিস রচনা ছিল ‘মাজার সংস্কৃতি এবং ক্ষমতায়নের শ্রেণীকরণ’। গবেষকগন ক্ষমতা সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ক্ষমতার নানা রূপ দেখেছেন, ক্ষমতাবান হয়ে উঠার প্রক্রিয়া দেখেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহারও ব্যাখা করেছেন  কিন্তু কোন গবেষণাই ‘ক্ষমতাকে’ ব্যাধি হিসেবে সাহসি উচ্চারন করতে পারেনি। কবি অত্যন্ত সাহসী উচ্চারন করেছেন।


আমাদের সমাজ বাস্তবতায় দেখি, দায়িত্বকে মানুষ ক্ষমতায় রুপান্তরিত করে নিজের স্বার্থে। দায়িত্ব ভুলে গিয়ে অথরিটি এর অপব্যবহার করেই মানুষ ক্ষমতাবান হয়ে উঠে । ফলে অথরিটি এবং ক্ষমতা শব্দ দুটি মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়, চাপা পড়ে যায় দায়িত্বজ্ঞান এবং শব্দটি। Power, Authority এবং Responsibility তিনটি শব্দকে যে যার মত করে ব্যবহার করে, অন্যকে ভুল বুঝিয়ে নিজের ফায়দা লুটে নেয়।  গভরনেন্স শব্দটি মুলত নিরপেক্ষ (নিউত্ত্রাল) শব্দ কিন্তু এর অপব্যবহারের কারনে এখন আমাদের বলতে হয় Good Governance, Bad Governance. ঠিক তেমনি Power শব্দটি একটি পজিটিভ শব্দ কিন্ত এর অপব্যবহারের কারনে এখন বলতে হচ্ছে ‘ক্ষমতার ব্যাধি’, যেমনটা কবি বলেছেন।


এখানে কবি, ক্ষমতার অপব্যবহারের বেশ কয়েকটি উদাহরন দিয়েছেন “প্রাণে মেরে দেই যারা করে তাঁর প্রতিবাদ“ কিংবা নিরুপায় জনগণ প্রাণ ভয়ে চুপ রয়” অর্থাৎ সমাজে কেউ কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে না, মুখ বুজে সব মেনে নেবে অন্যথায় ক্ষমতাবান মানুষ তার ক্ষমতার প্রয়োগে চুপ করিয়ে দেবে। কোন সমাজে যখন ক্রমাগতই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হতে থাকে তখন তা ব্যাধির আঁকার ধারন করে। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় এরকম শত শত কিংবা লক্ষ লক্ষ উদাহরন দেয়া যেতে পারে, কবি কয়েকটি মাত্র উদাহরন দিয়েছেন।  কিন্তু এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে যদি ‘নিজের বিবেক’ এর জাগরন হয় কিংবা জনতার জাগরন এর মধ্য দিয়ে একটি পরিশুদ্ধ সমাজ নীতি তৈরি এবং প্রায়গিক ক্ষেত্র তৈরি করা যায়।


ক্ষমতার ব্যাধি রোধ করার জন্য ইহজাগতিক ক্ষেত্র থেকে কবি আবার পরকালের ভয় ভীতির মাধ্যমে নিজেকে এই ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন “তুচ্ছ এ পৃথিবীতে কেউ চিরজীবী নয়”, কিন্তু শেষ করেছেন একটি  হতাশাজনক বক্তব্য দিয়ে, “চীৎকার করে বলি আমি অপরাধী,তবুও ছাড়েনা পিছু ক্ষমতার ব্যাধি!”। দায়িত্বের অনুরাগ অপেক্ষা দায়িত্ব পালনে যে প্রায়গিক ক্ষমতা দেয়া হয় তার অপব্যবহার করে ক্ষমতাবান হয়ে উঠার যে লোভ তার থেকে মুক্ত হয়ে উঠা সম্ভব হয় না এবং আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগুলোও আক্ষরিক অর্থে সমর্থন না করলেও বাস্তবতায় ক্ষমতার অপব্যবহারকেই সমর্থন করে। ফলে ক্ষমতাবান মানুষগুলো ক্ষমতার ‘এই ব্যাধি’ নিয়ে জীবন যাপিত করে।  পরকালের কোন ভয় ভীতিও খুব বেশী কাজ করে না।


কবি খুবই কমপ্লেক্স একটি ইস্যু নিয়ে কবিতা লিখেছেন এবং অনেকগুল প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন যেমন- ক্ষমতা কেন ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায়, পরকাল ভাবনা, জনতার সম্মিলিত শক্তি, ব্যাধির কাছে পরাজয় ইত্যাদি, ফলে একই সাথে অনেকগুলো ডাইমেনসন পাঠকে বিচলিত করে তুলতে পারে । কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।