আলোচনা  ১৭৫


কোভিড-১৯, সময়কাল বিশ্বব্যাপী এক নুতন অভিজ্ঞতা, নুতন ইতিহাস, নুতন ধ্যান ধারনা। এর আগেও মানব সভ্যতা মহামারি মোকাবেলা করছে কিন্তু কোভিড-১৯ এর মতো এতোটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এর আগে কখনো হয়নি। ২০১৯-২০২১ সময়কালে নুতন নুতন শব্দের (যমন-লকডাউন, সম্পুর্ন লকডাউন ইত্যাদি) সাথেও মানুষের পরিচিতি হয়েছে, জীবন যাপন প্রনালীতে এসেছে নুতন ধারা।


কোভিড-১৯ এর সময়কালে তৈরী হয়েছে নানা গল্প, মানুষের জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। মানুষে মানুষের সম্পর্কের টানাপোড়ন নুতনভাবে উপলব্ধি করতে শিখেছে, বাবা মা ভাই বোনের মতো সপর্কগুলোও নুতন রূপে মানুষের অভিজ্ঞতায় এসেছে। ধর্মের বানী নুতনভাবে উপলদ্ধি বুঝতে শুরু করেছে। এ সময়কালের মানুষের জীবন উপকরন নিয়ে কেউ লিখছে গল্প, উপন্যাস, তৈরী হচ্ছে ডকুমেন্টিরি, কেউ লিখছে কবিতা, গান। সব মিলিয়ে এ সময়কার ইতিহাস নিয়ে লেখা সব কিছু নিয়ে কোন এক সময়, আরো ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর পরের প্রজন্মের মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হবে, দারুন উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এসময়ের মানুষের জীবন কাহিনী পড়বে, গবেষনা করবে। ফলে, এ সময়কার লেখা যে কোন কিছুর একটা ঐতিহাসিক মূল্য থাকবে।


আসরে একেবারেই নবীন কবি (সবে মাত্র ৩টি কবিতা প্রকাশ করেছেন) আহম্মদ জোবায়ের এর আলোচ্য কবিতা “লকডাউনের প্রেম”, এর ও একটি ঐতিহাসিক মূল্য থাকবে কোন এক সময়। লকডাউনের সময়, মানুষের বন্দী জীবনে ঘটেছে নানা ঘটনা, নানা অঘটন, গড়েছে অনেক নুতন সম্পর্ক আবার ভেঙ্গেও গেছে অনেক সংসার। বন্দী জীবনে কারো কারো জীবন ও জীবিকায়ন নিয়ে গরদঘর্ম হয়েছে কিন্তু যাদের অর্থনৈতিক টানাপোড়ন ছিলো না, তাদের জীবন নানামুখী ভিন্নতায় ছিল ভরপুর। সারাদিন কিছুই করার ছিল না, ফলে টিভি দেখে, ফিল্ম দেখে সময় কাটানো ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলো না। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় একটা সময় কেটেছে জানা অজানা মানুষের সাথে চ্যাট করে, ফেসবুকিং করে। ফলে গড়ে উঠেছিল নানা মাত্রার সস্পর্ক। কখনো কখনো সম্পর্কগুলো বাঁক নিয়েছে নানাভাবে, কখনো প্রেম রূপে কখনো বা তিক্ততা রূপে। কবি এখানে, “লকডাউনের প্রেম” কাব্যে, ফেসবুকিং এর মাধ্যমে কিভাবে ধীরে ধীরে একটি সম্পর্ক প্রেমে রূপান্তরিত হয়েছিল তার  একটা ধারাবাহিক বর্ননা দিয়েছেন, যেমনটা ফুটবল কিংবা ক্রিকেট মাঠে ধারাবিবরনী দিয়ে থাকে।


স্বাভাবিক একটি জীবন চলছিল, সবই ছিলো ঠিকঠাক, এরই মধ্যে এলো করোনা ভাইরাস, শুরু হলো লকডাউন, জীবনের ছন্দে বাঁক নিতে শুর করলো। সারাক্ষন ঘরে থাকায় মন বসে না, বাইরেও যাওয়া যাচ্ছে না, সরকারি  নিষেধাজ্ঞা, কি আর করা !! শুরু হলো, নুতন গতি পথ, ফেস বুকিং, নুতন নুতন ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করা। কবির ভাষায়-


হঠাৎ করে অচেনা এক মেয়ের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো
মেয়ের প্রোফাইল দেখে আমি পুরাই মুগ্ধ
এতো সুন্দর মেয়ে আমায় রিকোয়েস্ট পাঠালো
এই ভেবে নিজেকে খুব সুদর্শন লাগলো
খুশির ঠেলায় রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম


এভাবেই চলতে চলতে সম্পর্কের অগ্রগতি,  সীমানা পেরিয়ে, দূর সীমানায় গন্তব্য, চলতে চলতে অবশেষে, লকডাইনের শেষ কিন্তু নুতন সম্পর্কের আরো অগ্রগতি, দেখা সাক্ষাৎ......


এবার কবিতায় নাটকীয় বাঁক, ফেক আইডি খুলে, মামা ভাগ্নের প্রেম চলছিল কিন্তু দেখা সাক্ষাতের পর সব ভণ্ডুল হয়ে গেলো। ভাগ্নেকে ঘরবন্দী রাখার জন্য মামার নুতন ফন্দী, হা হা হো হো...


লকডাউন সময়কালে ফেস বুকিং এর কল্যানে যেমন নুতন নুতন প্রেম  গজিয়ে উঠেছিলো আবার এরকম নানা রকম ফেক আইডি’র মাধ্যমে অনেক অঘটনও ঘটেছিল। কবিতায় বাস্তবতাই উঠে এসেছে।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা