আলোচনা  ১৩২


কবিতাটি বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষন করার একটি কারন হলো, কবিতার শিরোনাম “মতাদর্শ”। আমরা সবাই কোন না কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী। সমাজনীতিতে মতাদর্শ আছে যেমন-সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ, পুঁজিবাদী মতাদর্শ। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়েও নানা রকম মতাদর্শ আছে যেমন-নারীবাদ, সাম্যবাদ। বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে নানা মতাদর্শ, নানা ধর্ম আবার একই ধর্মে নানা মাযহাব মানে নানা মতাদর্শ। এছাড়াও আছে নানা ধরনের দার্শনিক মতাদর্শ (কিছুদিন আগেই একটি কবিতা আলোচনায় লিখেছিলাম তাও-তে-চিং মতাদর্শ)।


ছাত্রজীবনে আমি সমাজতান্ত্রিক ধারনা দ্বারা মোহিত ছিলাম, চাকুরী জীবনে নারীবাদ নিয়ে সোচ্চার ছিলাম মাঠে ময়দানে, মানবাধিকার আমার রক্তে মিশে আছে। কোন একটা সময় নাস্তিকতাও চর্চা করেছি ফলে নানা ধরনের “মতাদর্শে” এর মধ্য দিয়ে জীবন গড়িয়েছে, নানা ধরনের মতাদর্শের সাথে সহমত, মতবিরোধও ছিল। ফলে এই কবিতার শিরোনাম,  “মতাদর্শের তর্ক” শব্দ দুটিই আমার আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু ছিল।


মানব সভ্যতা এগিয়ে চলছে আর নুতন নুতন মতাদর্শ তৈরি হচ্ছে, মানুষের মধ্যেই আরো বিভক্তি বাড়ছে। বিভক্তিকে কেন্দ্র করে বিরোধ না বাধলে, ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ বরং ভালো, সেটা সমাজের জ্ঞান চর্চাকে এক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এখানে নানা ধরনের মতাদর্শ নিয়ে যে বিভক্তি তৈরী হয়, সেটা নিয়েই কবির যাবতীয় ভাবনা।


শিল্প সাহিত্য অঙ্গনেও নানা ধরনের মতাদর্শ আছে এবং তা নিয়ে বিরোধও আছে , এমনকি কবিতা নিয়েও নানা ধরনের মতাদর্শ দেখতে পাই, কবিতার ব্যাকরন, ছন্দ, কবিতার শব্দ চয়ন, কবিতার প্রেক্ষিত ও কবিতার আধুনিকতা ইত্যাদি নানা ধরনের মতাদর্শ। আমরা সারাক্ষন তর্ক বিতর্কে লিপ্ত থাকি নিজের মতাদর্শের সাথে অন্যের মতাদর্শের মিল বা অমিল নিয়ে এবং এটা নিয়েই তর্ক যুদ্ধ করতে থাকি। কিন্তু  শেষ পর্যন্ত কোন মতাদর্শ সঠিক, কোন মতাদর্শ সবাই মেনে নিবে কিংবা আদৌ কি সবার জন্য একই মতাদর্শ প্রযোজ্য? সেইটি প্রথম ঠিক করা দরকার, সে কারনেই কবি প্রথমেই লিখেছেন-


যে কবিতা এখনো হয়নি রচিত,,
ধারনা আসেনি মনে;  
যে  তৈলচিত্র এখনো হয়নি অংকিত
নকশা আসেনি শিরে;
যে কর্ম এখনো হয়নি সাধিত,
পদবিক্ষেপ আসেনি ভিড়ে।


আমরা সবাই, যারা কবিতা লিখি, এখনো আমাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ কবিতা লিখতে পারিনি, কেউ কেউ সারাজীবন সাহিত্য চর্চা করেও তার জীবনের শ্রেষ্ঠ লেখাটি না লিখেই চলে যান পৃথিবী থেকে একটা আক্ষেপ নিয়ে। যে কবিতা এখনো আমরা রচনাই করিনি অথচ আমরা বিতর্কে জড়িয়ে পরি মতাদর্শ নিয়ে।


একই বিষয়, শুধু কবিতায় কেন, সেটা গল্প, উপন্যাস কিংবা চিত্রাংকনেও দেখা যায়। তৈলচিত্র নিয়ে নানা মতাদর্শ বিরাজ করে শিল্পীদের মধ্যে। মোট কথা কবি বলতে চেয়েছেন, ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ ছিল এবং থাকবেই কিন্তু মতাদর্শের ভিন্নতা নিয়ে মতোবিরোধ কখনোই কাম্য নয়। কবিতাটি আমি এভাবেই অনুভব করেছি।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।