তোমার অর্পিত প্রতিটি আঘাত,
যেন স্মৃতির জীর্ণপত্রে দগ্ধ চিহ্ন—
অবহেলায় ত্যাজ্য, তবু মনঃপটে অনিবার্য।
বিস্মরণের দ্বার সুলভ নয়;
ভুলে যাওয়া এক অলীক কল্পনা,
যেমন পুরনো কাপড়ের দাগ মুছে ফেলার দুরাশা।
ক্ষমার গগন এমন অসীম নয়—
যাতে দণ্ডহীন শকুনেরা উড়তে পারে নির্বিচারে!
বরং সে গগনে পুঞ্জীভূত প্রতিশোধের ধোঁয়া,
যেখানে প্রতিটি পক্ষী চিল—
আর তার ডানার ছায়ায় ক্ষতের নীলাভ বিস্তার।
চিতার অগ্নিপরশে নগ্ন স্মৃতি যখন দগ্ধ হয়,
তখন তা বিলীন নয়,
বরং রূপান্তরিত হয় বিষবাষ্পে,
যা হৃদয়ের অলিন্দে ঢুকে
এক ক্রমবর্ধমান বেদনার বৃত্ত নির্মাণ করে।
তুমি ভেবেছিলে—
ছিন্ন অংশে সূচ-সুতোয় জোড়া লাগালে,
মন আবার ফিরে যাবে পূর্বাবস্থায়।
না, হৃদয় কোনও পুনর্ব্যবহারযোগ্য বস্ত্র নয়;
সে এক অন্তঃসলিলা নদী,
যার উৎসে একবার বিষ মিশলে,
তার স্রোত আর বিশুদ্ধ হয় না।
ভাঙনের পর যে শ্মশান জন্ম নেয় হৃদয়ে,
সেখানে ক্ষমার আকাশ দুর্লভ—
বরং থাকে অবিরাম ছায়া,
থাকে অন্ধকারে ওৎ পেতে থাকা চিলেরা,
যারা প্রতিটি পুরনো ক্ষতকে নতুন করে ছিন্ন করে যায়।
স্মৃতির দহন অবিরাম,
তার ধোঁয়া রক্তে মিশে হয়ে ওঠে
অন্তঃশূন্য বিষাক্ত সত্তা—
এক মৃদু অথচ নিরবধি মৃত্যুর ঘ্রাণ।
তবু, হয়তো ভাগ্য এবার পথ বদলাবে।
হয়তো এই নাভিকুণ্ডু—যেখানে জন্ম হয় সবকিছুর,
তাকে আমি নিক্ষেপ করব শূন্যতার সলিলে।
সেখানে থাকবে না ছাইয়ের ভার,
থাকবে না বিষের সমাহার।
থাকবে এক নির্বিকার বিশ্রাম,
এক আত্মার নির্বিকল্প অবগাহন।
শূন্যতা থেকে উৎপন্ন হবে নবসত্তা—
যা স্মৃতিহীন, দহনমুক্ত,
প্রাপ্তির মৌন প্রকাশে দীপ্ত।
যা এমন একটি জগৎ,
যেখানে মুক্তি হবে না এক মুহূর্তের বিশ্রাম,
বরং হবে ক্ষয়ের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া —
এক অনন্ত শান্তির আর্তস্বর।
==========