সম্পর্ক—এ এক অদৃশ্য, অথচ অনতিক্রম্য গ্রহসূত্র।
যেন কোনো অতিপ্রাকৃত মহাশক্তি,
যা নিঃশব্দে চেতনার বৃত্তকে বাঁধতে বাঁধতে এক অলীক জালে পরিণত হয়।
এর আরম্ভ যেন এক স্বপ্নময় শুরুর অপারগতা—মুগ্ধতার মৌনতায় মোড়ানো।
প্রথমে মনে হয়, আমরাই চালকের আসনে,
স্বাধীনতার পতাকা উড়ছে হাতে,
দিনরাত্রি নিজের অভিপ্রায়ে প্রবাহিত।

কিন্তু এই দৃশ্যমান স্বাধীকার আসলে এক ছদ্মাবরণ!
সম্পর্কের সূক্ষ্ম সুতো আপন অস্তিত্বের কোষে কোষে অনুপ্রবেশ করে!
আপনি বুঝতেই পারেন না কবে তা আপনার অবচেতনে দখল করে নিয়েছে।

এর মায়া প্রথমে কোকিলকণ্ঠী, নির্বিষ, মিষ্ট।
এক রহস্যময় আবেশ, যাকে ছুঁতে ইচ্ছা করে বারবার,
যেন কোনো অজানার আবাহনে সাড়া দিচ্ছে আত্মা!
আপনি ভাবেন, এই মোহ কাটিয়ে ওঠা এক নিমেষের ব্যাপার।

কিন্তু এই বিশ্বাসই সম্পর্কের প্রাথমিক প্রতারণা।
যতই সময়ের পাথেয় জমান,
ততই সেই অদৃশ্য ফাঁদে গাঁথা পড়েন আপনি, নিঃশব্দে, নিষ্ক্রমণহীনভাবে।
আর এক সময় এসে চেনা পৃথিবী এক গহ্বররূপে আবির্ভূত হয়।
ছাড়তে চাইলে টান পড়ে আত্মার শিরায় শিরায়।
সেই বিচ্ছেদ কেবল একটি শরীর থেকে সরে যাওয়ার নয়, বরং তা আত্মপরিচয়ের অন্তঃশোধন।

সম্পর্ক থেকে মুক্তি মানে নিজেকে পুড়িয়ে এক ভস্মাবশেষে পরিণত করা।
যেন আত্মার শুদ্ধিকরণে আত্মহননের আগুনে ঝাঁপ দেওয়া।
সেই দহনে আপনি টের পাবেন—
আপনি ছিলেন কোনো মোহের বাসিন্দা,
যার আবরণ ছিল মায়ার, কিন্তু কেন্দ্রে ছিল যন্ত্রণা।

একবার সেই বন্ধন ছিন্ন হলে, হ্যাঁ, মুক্তি আসে।
আসে পুনর্জন্মের সম্ভাবনা।
কিন্তু সেই নতুন আপনি, পুরোনো আপনির প্রতিচ্ছবিও নয়।
সময়, স্মৃতি ও যন্ত্রণা আপনাকে রূপান্তরিত করে এমন এক সত্তায়, যার চলন, চিন্তা, অনুভব—সবই বদলে গেছে।

সম্পর্ক আসলে এক মায়াজাল নয়, বরং আত্মার অগ্নিপরীক্ষা।
যত গভীরে যাবেন, তত জড়াবেন।
মুক্তি চাইলে, পোড়াতে হবে নিজেকে,
নীরব দহনে গলিয়ে তুলতে হবে এক নতুন আপন অস্তিত্ব।

========