রাতের অন্তরীক্ষে এক খণ্ড জ্যোৎস্নামাখা নিঃশব্দতা ঝুলে থাকে,
যেন সে একান্ত বিস্ময়ের ভারে অবগুণ্ঠিত।
চাঁদ—একাকী, নির্বিকার,
যেন শূন্যতার মর্মস্থলে স্থাপিত এক শ্বেত আগ্নেয়পিণ্ড।
শহরের বৈদ্যুতিক চক্ষুগুলো ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারায়, যেন তারা আলোকহীনতার এক অনন্ত সম্মোহনে আত্মসমর্পণ করছে!
আমি হাঁটছি, নৈঃশব্দ্যের এক গাঢ় আবরণে মোড়ানো ধূসর পথপথিকায়;
যেখানে প্রতিটি পদচিহ্ন সময়ের ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়কে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।
এ শহর যেন এক বহুরৈখিক জীবন্ত কাঠামো!
যেন রাত্রির অন্ধকারে প্রবেশ করেই আত্মিক নির্জনতায় লীন হয়ে যায়।
তার কোলাহলচিত্র মুছে গিয়ে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতার পরিধিতে আবদ্ধ হয়।
প্রাচীন অলিগলিরা যেন শ্রবণযোগ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে;
আজ বাতাস যেন, আর্দ্র, অতীত আর শব্দহীন!
যেন বেদনার এক অপার্থিব সংমিশ্রণে ভারাক্রান্ত।
এই নগর যেন কথা বলতে চায়—
কিন্তু শব্দে নয়, নিস্তব্ধতার নিঃশেষে;
চায় তার অব্যক্ত ইতিহাস, ধূসর স্বপ্ন, ও বিস্মৃত আকাঙ্ক্ষাগুলোর ভার লাঘব করতে।
পার্শ্ববর্তী উদ্যানের ফাঁকা আসনগুলো নিশব্দ!
যেন প্রত্যাশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
গাছপালার মৃদু কম্পনে যে শব্দ সৃষ্টি হয় তা যেন শূন্যতার মধ্যেও এক স্পষ্ট উপস্থিতি বহন করে।
রাতের এই নিরাবরণ নিস্তব্ধতা, হয়তো মনের সুপ্ত স্তরে ঘুমিয়ে থাকা কথোপকথনকে জাগিয়ে তোলে!
জাগিয়ে তোলে সেইসব উচ্চারণ, যেগুলো দিনের প্রখর আলোকের সামনে অস্তিত্ব হারায়।
আর চাঁদ, সেই চিরস্থায়ী নিরীক্ষক, নির্বাক থেকে যায়, তবুও সে সর্বজ্ঞ।
সে বোঝে হৃদয়ের গূঢ় আর্তনাদ, শব্দহীন আহ্বান।
তার দিকে তাকালে মনে হয়—
সে সমস্ত নিঃসঙ্গতা, সমস্ত নিঃশব্দতা যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে;
মনে হয় সে রাতের নয়, সে অন্তর্লোকের ভবিতব্যে ঝুলে থাকা এক শ্বেতাতপ মণিদীপ।
==========