ঘড়ির নির্লিপ্ত কাঁটা অনবরত সময়ের অনুক্রম গুনে চলে, কিন্তু থমকে যায় জীবনযাত্রার অবহেলিত, অবজ্ঞাত মুহূর্তেরা!
হয়ে যায় জমাট বাঁধা দীর্ঘশ্বাসের মতো স্তব্ধ, অথচ রুদ্ধ।

অন্তর্গত ফুসফুসের অন্তঃসলিলা আন্দোলনে হঠাৎ ধক্ করে কেঁপে ওঠে অস্তিত্বের শিরা,
মনে পড়ে নিষ্প্রভ অতীতের উজ্জ্বল জীমূতের রেখাচিত্র,
স্পর্শাতীত শুকতাঁরার মতো এক অন্তর্হিত যৌবন,
যার দীপ্তি আজও হৃদয়ের অন্তঃপুরে ক্ষীণ ঝলকানি হয়ে জ্বলে।

বুকে গুমরে থাকা আবেগের অনির্বচনীয় ভারে উচ্চারিত হয় এক গোপন আর্তি—
"স্মরণ আছে কি, সেই উদ্দাম মুহূর্তের?
যেখানে ছিলে তুমি—আমি—আর ছিল বেঁচে থাকার উন্মাতাল প্রত্যয়?"

সেদিনের নির্মল অমেয়তাকে ছেড়ে আসার নির্মমতা কি বুঝেছিলাম?
ভেবেছিলাম কি, সময় এভাবে নীরবে নিঃশেষ হয়ে যাবে?
জীবনের পরতে পরতে যে জমে থাকা স্মৃতির ধূসর আবরণ,
তা প্রত্যেকটি বিন্দুতে সময়ের অশ্রুবিন্দু এঁকে গেছে—
অস্পষ্ট অথচ অবিনাশী।

নড়েচড়ে ওঠা ক্লান্ত ফুসফুস আজও বেদনাবিধুরভাবে জীবনকেই সম্বোধন করে—
"ভুলো না আমায়।
আমি ছিলাম প্রতিটি উচ্ছ্বাসে, প্রতিটি দহনক্লিষ্ট কান্নায়, প্রতিটি উন্মুখ দৌড়ে।"

শুকতাঁরার দীপ্তি শুধু আকাশবিহীন আলোকরেখা নয়,  তা জীবনের হারানো চেতনার এক নীরব সাক্ষী।
আজ, যখন নিঃশ্বাসের প্রতিটি সুর ক্রমাগত ক্ষীণতর হয়, অতীতের অম্লান ঢেউ এসে বারবার আছড়ে পড়ে হৃদয়াকাশে,
তখন অনুধাবন করি—প্রত্যেক অবহেলিত ক্ষণই
একটি অনতিক্রম্য নক্ষত্রের প্রতিমা।

ঘড়ির কাঁটা নির্বিকার সময়প্রবাহ রচে,
আর আমরা, অনিবার্য নশ্বরতায় প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে অনুভব করি—
জীবন বেঁচে থাকে পিছিয়ে পড়া, অপূর্ণ, বিস্মৃত মুহূর্তের সুধামৃত গভীরতায়।

অতীতের প্রতিটি উজ্জ্বল জীমূত,
আজ ঝরে পড়া অশ্রুর মতো নিঃশব্দে মিশে যায় বিস্মৃতির বৃষ্টিতে।
সময় স্থির হয় না,
কিন্তু আমরা—আমাদের ক্লিষ্ট শ্বাসে,
আমাদের নির্লিপ্ত স্মৃতির ভারে—
চুপিসারে থেমে যাই।

আর ঘড়ির কর্কশ শব্দ বারবার মনে করিয়ে দেয়—
বয়স এগোয়, দেহ ক্ষয় হয়,
কিন্তু স্মৃতির অনির্বাণ প্রদীপ
অনন্তকাল ধরে দীপ্ত থাকে।
জীবন, সেই দীপ্তির অনুরণনমাত্র।

=======