রাত তিনটা, শহর নিঃশব্দ,
কিন্তু নিঃশব্দ নয় আমার পিঠের নিচে বাজতে থাকা ঘুণধ্বনি,
আমি তো শুধুই ফিরছিলাম,
হাওরের জল শুকিয়ে মনের মধ্যে একটু সবুজ রাখতেই।

"কই ওয়?" — প্রশ্ন নয়,
এ যেন ফাঁসির আগে শেষ হাসির মতো শ্রুতিকটু এক নাটকীয়তা,
স্কুল কি পাঠিয়েছে আমায়?
হলে কি স্যার রুম চেক করেন না?
এমন প্রশ্নে মাথার ভেতর
লাঠির শব্দ বাজে, না— বাজে রাষ্ট্রের কষ্টার্জিত ঘুমভাঙা নিপীড়নের সংগীত।

আমি আইডি দেখিয়েছিলাম,
আর তারা দেখিয়েছিল মুখ— যাদের চোখে
আইনের আগে আসে অভিমান,
আর অভিমানের আগে আসে— অহংকার।

আমি একজন ছাত্র,
তোমার মতোই মাটি থেকে উঠেছি,
কিন্তু আমি হাওরের গন্ধ নিয়ে ফিরেছিলাম,
আর তুমি— লাঠির গন্ধে ভাসিয়ে দিলে ইতিহাস।

আমি দাঁড়ালাম,
তুমি পুশ করলে, চার আঙুলে,
আমি প্রশ্ন করলাম,
তুমি লাঠি চাইল।
আমি প্রতিবাদ করলাম,
তুমি বললে "দাঁড়ান, দাদা আসছে",
দাদা এলো, সাথে পঞ্চাশের বাহিনী—
আর আমি, একটি ছায়া,
পাঁচ মিনিটে বস্তা-পেটানো শরীর।

আমার অপরাধ— আমি ছাত্র,
আমার অপরাধ— আমি প্রশ্ন করেছি,
আমার অপরাধ— আমি একটা নাম্বারে কল করেছি,
একটা আর্মির ক্যাপ্টেন বন্ধু,
সে-ও হয়তো মানুষ ছিলো এক সময়,
আজ তার পরিচয়ই শাস্তিযোগ্য!

দেখো রাষ্ট্র,
তোমার বুটের নিচে গড়ে উঠেছে যাদের সম্মান,
তাদেরই বুট আমার পিঠে পড়েছে বারংবার।
দেখো, রাষ্ট্র,
তুমি তো বলেছিলে— "ছাত্র রাজনীতি শুদ্ধ করো",
কিন্তু এই ছাত্রের শরীর থেকে রক্ত ঝরানো কি
তোমার আদর্শের অন্তর্গত ছিল?

দেখো, আমার কান ধরিয়ে বসানো হয়েছে
রাতের আঁধারে,
আমি বলেছি,
"আমার ভুল হইছে, শিক্ষা হইছে…"
তবুও ২৫০-৩০০ বার হিট,
এই রাষ্ট্র কি আদৌ কিছু শিক্ষা নিতে চায়?

আমার বিশ্ববিদ্যালয় চুপ,
আমার হল চুপ,
প্রভোস্টের ফোনও ঘুমায়—
কিন্তু আমি জেগে আছি,
আমার আঙুলে রক্ত জমাট,
আমার ঘাড়ে হাতের ছাপ,
আমার মনে— বিদ্রোহ!

তোমরা লাঠি দাও,
আমি কলম ধার দিই,
তোমরা বুট দাও,
আমি কবিতায় মাটি দিই,
তোমরা দাদা ডাকো,
আমি ডাকবো ইতিহাস,
আর ইতিহাস কোনোদিন ক্ষমা করে না।



© মোহাম্মদ শেখ শাহিনুর রহমান
(২৬ শে জুন ২০২৫)
লেখক নিবন্ধন নম্বর: 6383805489940
এই সাহিত্যকর্মটি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে নিবন্ধিত।
লেখকের লিখিত অনুমতি ব্যতিরেকে এর যেকোনো অংশ ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয়।
সৃজনশীলতাকে সম্মান করুন।
#বিদ্রোহ
#কাব্য