না হয় কিছুটা কণ্টকে আটকে আছে স্বর
আঁধারের আয়োজনে প্রাসাদের পাল্লাটায়
বাধা হয়ে না হয় দাঁড়িয়ে আছে কতিপয় পেশীবহুল অবয়ব
গোছালো ঘরগুলো এখন না হয় একটু এলোমেলো
না হয় পেশীযুক্ত ও তার সহযোগী হাতগুলোতে
কলঙ্কিত মুদ্রার কিছুটা প্রাচুর্য
আইনের হাতগুলো না হয় একটুখানি এদিক-সেদিক ঝুঁকে পড়ে


তবুওতো মোয়াজ্জিনের আযানের মূর্ছনায়
প্রতিদিন সূর্য ওঠে, ভোর হয়
এখনোতো পাখিদের সুরেলা ভোরে
চাষারা কণ্ঠে গান নিয়ে ছুটে যায় ফসলের মাঠে
সোনালী ফসলের চিকচিকে হাসিতে তারাও হেসে ওঠে
আনন্দে দুলে ওঠে প্রাণ, এখনোতো খেলা করে
সবুজের ঢেউদোলা স্নিগ্ধ শীতল বিকেল


ফুলের কোমল পাপড়িতে একটু না হয় কাঁটার আঘাত
না হয় কিছুটা আড়িপাতা অবরুদ্ধ অনুভব
পাশের বাঁশঝাড়ে না হয় হুতুম পেঁচার ডাক
অশুভের আতঙ্কে কম্পিত অন্তর
তবুও এ আমার জন্মভূমি, আমার হৃৎপিণ্ডের নড়াচড়া
আমার ফুসফুসের অক্সিজেন, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস


কাকডাকা প্রতিটি ভোর
শীতের সকালে সুখকর রৌদ্রের আমেজ
গ্রীষ্মের রৌদ্রঘন দ্বিপ্রহরের একান্ত একাকীত্ব
লাজরাঙা গোধূলির আহ্লাদিত বিকেল
টুপ করে লুকিয়ে পড়া সূর্য, সন্ধ্যা নামে
গাঢ় হয় অন্ধকার, পাশের কাশবনে শেয়ালের হাঁক
জড়ো হয়ে বসে দাদির মুখে রূপকথার গল্প শোনা
জ্যোৎস্নাস্নাত মধ্যরাতে ভূত দেখা শিহরিত স্বপ্ন
এসব নাম ধরে ডাকতে থাকে আমাকে -
আমার পিতাকে, পিতামহকে, প্রপিতামহকে, পূর্বপুরুষদেরকে
তখন কবিতা হয়ে যাই আমি
আর সাঁতার কাটি ভৈরব নদের জলে
হিজল গাছের ডগা হতে ঝাঁপ দেই পুকুরে
দুলে উঠি হেমন্তের ধানক্ষেতে বাতাসের গর্বিত দোলায়
শিল্পী হয়ে যাই - মাছরাঙা ধ্যানে, শালিকের গানে
কোকিলের সুরে, দোয়েলের শিসে
ঝুম বৃষ্টিপাতে টিনের চালের কোলাহলে
আমার কণ্ঠ হয় কবিতার শব্দমালা


আমি দ্রাবিড়ের পদচারণার শব্দ শুনি বারবার
আমার জন্মভূমিতে, তিন নদীর মোহনায় - গাঙ্গেয় বদ্বীপে
তখন দিশা হয় আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ
রহস্য ভেদ করে খুলে যায় সম্ভাবনার দোয়ার
আর আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যায় -
আযানের সুরে, ভৈরবের জলে, ফসলের মাঠে
কৃষকের ঘামে, এ মাটির প্রাণ ও প্রকৃতিতে
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে, রূপকথার গল্পে, পলিজমা উর্বর পৃষ্ঠে
মরমে গেঁথে যায় আপন নাড়ির বন্ধন
জন্মভূমি হয়ে পড়ে মায়ের উৎকণ্ঠিত মুখ


এখন সময় একটুও ভালো নয়
তোমরা আরও যদি নৃশংস হতে চাও, হয়ে যাও!
পশ্চাতে লাথি মেরে যদি বলো দেশ ছাড়
তবুও আঁকড়ে ধরবো -
দেহের কোষে কোষে জমে থাকা জন্মভূমির ধুলোকে
আপন মাটির প্রতিটি অণু-পরমাণুকে
জীর্ণ হলেও রয়ে যাবো জন্মভূমি-জননীর আঁচলের তলে।


ফিরোজ, মগবাজার, ২৪/০৮/২০২১