পদ্মপুকুরের পাড়ে বসে, শিশিরভেজা ভোর,
কলম ধ’রে লিখতে বসে, এক কবি মনচোর।
নামটি তার “পদ্মলেখা”, অদ্ভুত সেই মেয়ে,
যার চোখেতে স্বপ্ন সাজায় চাঁদের আলো বয়ে।

তার হাঁটার শব্দ শোনায় যেন বাঁশির সুর,
মাটির গন্ধে মিশে আছে পদ্মপাতার গরুর।
সে যে আসে নিঃশব্দ পায়ে কুয়াশাঘেরা বেলা,
ফুলের মতো ফুটে ওঠে, জোৎস্নার খেলার মেলা।

স্কুলে যেতো একলা হেঁটে, খাতা ছিল হাতে,
ছোট্ট ছড়া গুনতো মুখে, শিশির জলে পাতে।
কিন্তু মনটা ছিল যেন অন্য রঙের ছবি,
সবার চেয়ে আলাদা তার স্বপ্নগুলো ছিল বেশি।

একদিন এক টিচার বলল, “তুমি হবে কবি,
তোমার লেখায় হৃদয় কাঁদে, চোখে আসে জলরাশি।”
সেই কথা আজও গায়ে বাজে, ভাসে নীল আকাশে,
শুধু লেখে আর লেখে পদ্মলেখা স্বপ্ন-ছায়া পাশে।

"কবিতা নয়, হৃদয়ের স্পন্দন লেখো —
যেখানে জল পড়ে, সেখানেই নদী বয়।”
এই লাইনটি তার খাতার মাঝে, লিখা ছিল লাল,
একদিন শহরও দেখল সে, নীল রঙের পাল।

পদ্মলেখা হারিয়ে গেলো, কোথায় কেউ জানে না,
শুধু কাগজের পাতায় পাতায়, সে এখনো গানে গা।
তার খাতাটি জাতীয় জাদুঘরে, শিশুরা পড়ে প্রেমে,
“এই মেয়েটি বাংলার গর্ব”— শোনায় তারা মর্মে।

আজও যদি পদ্মপুকুরে বসে কারো মন,
তাকে খোঁজে পাতায় পাতায়, সে কবির মনন।
সে আসে না তবু বৃষ্টি নামে পদ্মপাতায় শব্দ,
পদ্মলেখা যেন ফিরে আসে, কবিতারই রূপ-নবদ্ব।

অবশেষে এক প্রশ্ন রাখি বন্ধু, বলো তো মন খুলে,
একটি মেয়ে কেবল লেখে — তবু কেন জোৎস্না ঝুলে?
সে কি ছিল শুধু ছাত্রী, না বাংলার জ্যোতি?
যার ছায়া দিয়ে কবিরা বোনে হাজার কবিতার পুঁতি?