আমি টেলিভিশনের সামনে যাই না
আমার চোখ দুটো শুধু দেখতে চায়, বাংলা কবিতা পাতা আর
কবি বন্ধুদের নক্ষত্রলোকের মতো দ্যুতিময় রাশি রাশি কবিতা
তবে মা আমার! টিভির পর্দায় উন্মূখ তাকিয়ে থাকেন
আর শুনতে পাই নিচু লয়ে দুঃখী স্বর, কাকে যেন জিজ্ঞাসা,
আমরা কি আর বাঁচবো না?
শুনে বলি, মা তুমি যদি না বাঁচো, তবে আমিও বাঁচবো না
তারপর ঠাট্টায় যোগ করি, আমাদের যা কিছু আছে, উইল করে
প্রান্তিক মানুষদের দিয়ে রাখো না!
তার দুঃখী চোখ আরো মর্মাহত হয়, কিরে! সত্যিই তাহলে বাঁচবো না!


তুলতুলে প্রেমকাব্যের অস্থায়ী সমাধীর উপর পা রেখে
বলেছিলাম সেদিন আঠারোতে
মানবতাবাদী মহাঋষিদের দল তাদের সকল ইন্দ্রিয়ের
বিশ্রাম তুচ্ছ করে কাজ করে চলেছেন আমাদের বাঁচাতে
ভ্যাকসিন আসছেই! পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র আমার মাতৃভূমি
বাংলাদেশেও আছে ঋষিদের দল, আমার কবি বন্ধুদের দেশেও আছে
বলা যায় না, অবাক করে দিতে পারে তারাও - বিশ্বকে
মানুষকে পরাজিত করা যায়, ধ্বংস করা যায় না এবং অচিরেই হয়তো শুনবো
সারা শহর জুড়ে জানালা খোলার শব্দ আর ­উল্লাসী চিৎকার,
“মহাঋষিরা!!... ভ্যাকসিন তৈরী করেছেন...!!”
তবে আজ সারা বিশ্বের ঋষিদের মাঝে কেউ কেউ বলছেন, ভ্যাকসিন আসলেও,


“করোনাকে নিয়েই বাঁচতে হবে আমাদের”


তাদের এই সম্প্রচারে মনে পড়ে আমার চৌদ্দের পঙক্তি
“প্রকৃতির মাঝে প্রকৃতি দ্বারাই প্রোথিত একটি সংশোধন পদ্ধতি
পৃথিবীর ধমনীতে সূঁচ দিয়ে সেঁধিয়ে দেয়া করোনা ঔষধি”


প্রকৃতি কখনো করোনা ফিরিয়ে নেবে না!


তারপর, এখন দেখছি ঈশানে জাগছে ভয়ংকর ত্রিমূখী আপদ
প্রথম শঙ্কাটি, ষোলতে লিখেছিলাম


কোটি কোটি তর্জনী সমুদ্রসম উঠছে উর্ধ্বে
পশ্চিম থেকে তর্জনী দেখাচ্ছে পূর্বদিক
তর্জনীর চোখে যুদ্ধের ক্ষিপ্রতা জেগে উঠছে
চীন, তোমাকেই গ্রাস করতে আসছে তোমারই করোনা!


অপ্রতিরোধ্য করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ
চীন কে তারা ছাড় দিতে চাইবে না,
যুদ্ধের ঈঙ্গিত ভয়াবহ এক সত্য হতে পারে!
সাদা ডোম বাড়িটির ওই বায়ূগ্রস্থ বাঁদরটি
পারলে এখনই ছুঁড়ে মারে মিসাইল চীনের দিকে


তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয় ভয়টি সত্যি হতে বাধ্য অনেকটা!
কি করে? বলছি,


বিভূতিভূষন পড়েছিলে। সত্যজিত দেখেছিলে। রঙিন অশণি সংকেত। দুর্ভিক্ষ।
স্টেইনবেক পড়েছিলে। গ্রেপস অব র‌্যাথ। বয়স্ক লোকটিকে বাঁচাতে।
তরুণী তার স্তনের দুধ পান করালো। কোথাও পানি নেই। দুর্ভিক্ষ।


মনে আছে। অর্থ মন্দা। ২০০৭ - ২০০৯। আমার মাতৃভূমি অবাক করা এক অলৌলিক শক্তিতে দাড়িয়ে ছিলো। কিন্তু উন্নত বিশ্ব। শিরদাঁড়ায় ফাটল ধরেছিলো। কারণ মনে আছে?। সাবপ্রাইম বুদ্ বুদ্.....হো হো হো। এবার সেটার প্রয়োজন হবে না।


করোনা আনবে বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। তারপর দুর্ভিক্ষ। প্রস্তুত থেকো।
আমাদের কবিতার পাতা চিবিয়ে খেতে হতে পারে, অন্ন অপ্রতুলতায়।
আমাদের কষ্টে জমানো তহবিল, লুটেরা লুট করে একরাতেই নিমেষে করে দেবে হাওয়া।
তুলতুলে অস্থায়ী কাব্যসমাধী, হয়ে যাবে চিরস্থায়ী।


দুর্ভিক্ষ হলো মানুষকে নিমেষেই পিশাচে রূপান্তরের এক নিপূণ ক্যাটালিস্ট।
দুর্ভিক্ষে মানুষ মনুষত্ব্য হারায়।


দু’টি টাকা, এক মুঠো চালও নয়, এক মুঠো খুদ এর জন্য
মানুষ মানুষকে হত্যা করবে, নির্দ্বিধায়।
তার আগেই গলা টিপে নিজেকে আমি......তবু পিশাচ হবো না!


আমার কবিতার বিষয়টি ভালো লাগছে না? দুঃখিত কবি বন্ধুরা।
লিখতেই হলো। তবে এরপর তো কেউ কেউ তোমরা লিখবে। তাই না।


দুর্ভিক্ষ, অর্থমন্দা আর যুদ্ধ
করোনা ফেলেছে ঈশানে ভয়ংকর ছায়া।


প্রকৃতি করোনা ফিরিয়ে নেবে না!


(১০.০৫.২০২০)



*কিছু প্রাসঙ্গিক পুনরুক্তি আমার করোনা সিরিজ থেকে:
১. করোনা বারো (নক্ষত্রলোকের মতো দ্যুতিময় রাশি রাশি কবিতা)
২. করোনা আঠারো (তুলতুলে প্রেমকাব্যের সময় এটা একদম নয়)
৩. করোনা দশম (সারা শহর জুড়ে জানালা খোলার শব্দ)
৪. করোনা চৌদ্দ (মানুষের মতো আগ্রাসী এবং সর্বগ্রাসী প্রানী)
৫. করোনা ষোলো (চীন! তোমাকেই গ্রাস করবে তোমারই করোনা!)