সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া আর একটি ঘটনা প্রচন্ড ভাবে মনকে আলোড়িত করেছিল। এ ক্ষেত্রেও সেই একই রকম চিত্র ছিল। ভিডিও ক্লিপস টি সোসাল মিডিয়ায় অনেকেই হয়তো বা দেখে থাকবেন। হরিজন একটি ছাত্র অধিক পিপাসার্ত হয়ে জলের হাঁড়ি থেকে জল খেয়েছিল বলে উঁচু জাতের শিক্ষক বালকটিকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে দিল। ভিডিওকারী নিঃশ্চই বাচ্চা ছিল না। তাহলে কেন সে ওই রকম পৌচাশিক মারধোরের হাত থেকে শিশুটিকে রক্ষা করবার উদ্যোগ না নিয়ে সে ঘটনার ভিডিও করতে উদ্যত হলেন। আজ সমাজে সব জায়গাতেই প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তেই নানান অমানবিক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে। এসব দেখে শুনে অনেক আক্ষেপে কবি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন-


চারিদিকে এত রঙ, তবুও কেন বিবর্ণ হচ্ছে জীবন
সহমর্মিতার সীমাবদ্ধতা! নাকি আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জমান মন।


আধুনিক হাল ফ্যাসনের যুগে চাকচিক্যময় ঠাঁট বাট নিয়ে চলা মানুষগুলিকে বাহির হতে দেখে অনেক সুশীল ও সম্ভ্রান্ত মনে হয়। আসলেই কী তাই!! অহংকার আর দম্ভ সমাজে সকল স্তরের মানুষ জনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে আজকাল। কেহই আজ কাহারো প্রতি সংবেদনশীল নহে। ঘর আর বাহির সকল জায়গাতেই অমানবিকতার চিত্র। স্বেচ্ছাচারিতা আর অহং বোধে মত্ত মানুষ জন অতি আধুনিক অপিরিমিত জীবন যাপন করতে গিয়ে নিজের সংসারে নিজেই আগুল লাগিয়ে দেয়। নাতিদীর্ঘ পোষাক আশাক থেকে নেশা জুয়া নাইট ক্লাব আর অতি আধুনিক বৈধ পরকীয়া আজ জলভাত। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সন্তানাদিরা ধনী পরিবারের ছেলে মেয়েদের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় মত্ত। শালীনতা বোধ আর শ্রদ্ধা সম্ভ্রম অগাধ জলে নিপতিত। দয়া দান মায়া মমতা ইত্যাদি সৎ গুণগুলি কালে কালে বিলুপ্ত প্রায়। সামাজিক দায়বদ্ধতা কিছুটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়।


দিন দুয়েক আগেই কোনও এক সোসাল মিডিয়া খুব সম্ভবত ফেসবুকে একটি ঘটনার বৃত্তান্ত পাঠ করে চমৎকৃত হয়েছিলাম। ঘটনাটি ভিন দেশের। ঘটনাটি এই রূপ- কোনও এক বিখ্যাত গায়িকা বা অভিনেত্রী প্রকাশ্য রাস্তায় তার অর্ন্তবাসটি খুলে হাতে নিয়ে জোরে জোরে বলতে থাকেন এটি আমি নিলাম করতে চাই। সেখানে অনেক লোকের ভিড় জমে যায় আর সেটি পাবার জন্য হুড়াহুড়ি শুরু হয়ে যায়। দাম চড়তে চড়তে ত্রিশ চল্লিশ হাজার ডলারে পৌঁছে গেলে সেই সেলিব্রিটি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না জেনেও এই সামান্য জিনিসকে তোমরা এত দামে কিনতে প্রস্তুত অথচ নিঃস্ব গরিব অভাবী লোকেরা হাত পাতলে একটি ফুটি কড়িও তোমাদের হাত দিয়ে গলে না। আসলেই তিনি চোখে আঙুল দিয়ে তাদের মনের অন্ধকার দিকটিকে অসাধারণ ভাবে প্রস্ফুটিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আসলেই মানুষের হৃদয় আজ কলুষিত আঁধার ঘেরা।


গতি আর কম্পিটিশনের যুগে অবশ্যম্ভাবী কারণেই অনেক অনেক স্বার্থান্বেষী হয়ে উঠেছে মানুষ। প্রায় মানুষই আজ অনেক স্বার্থান্বেষী। আসলে মানুষের চাহিদার অন্ত নেই আর বিপুল জন বিস্ফোরণে চাহিদা আর লব্ধতার আজ আকাশচুম্বী ফারাক।যে কোন ক্ষেত্রেই তাই প্রতিযোগিতা। চাকরির দশ টি শূন্য পদের জন্য কয়েক লক্ষ বেকারের আবেদন পত্র জমা পড়ে। আংশিক সত্য হলেও শুধুমাত্র এই কারণের জন্য এমন সামাজিক অধঃপতন কী ঘটতে পারে..................!


কবি আশ্চর্য হয়ে হতাশার সুরে বলেছেন-


উপরের সজ্জায় বোঝা যায় কি! মননে আঁধার কতটা গহীন। (চলবে)