Sanjay Karmakar


  · Jhhuit8t77c7c1st7 rn2ot0aew  ·
প্রকৃতির কবিতা,"সফর বৃত্তান্ত"


ঘটনার সূত্রপাত ট্রেনে দুপুরের দিকে।গত পরশু সকাল সারে সাতটার কাঞ্চনকন্যা ট্রেনে আমি আমার বন্ধু রাকেশ কুমার শ্রীবাস্তব কলকাতার উদ্দেশ্য রওনা দি। অনেক চেষ্টা করেও আসরে আসবার জন্য নেট পাচ্ছিলাম না বলে ফোন রেখে দি পকেটে। দুপুর নাগাদ হটাত মুড হয় কবিতা লিখবার। তাকে বলি, "কী বিষয়ের উপর লিখবো বলুন"। সে কিছু বলবার আগেই ডানদিকের উপরের বার্থের এক ভদ্রলোক বলে ওঠেন, "আপনার এই সফরের বিষয়েই লিখুন না", আমি বলি,"ঠিক আছে লিখছি"। কাগজ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। যাই হোক অনেক খোঁজে একটা পাতা পাওয়া গেলে কাগজ হাতের তালুতে রেখে লেখা চালু হয় আপন মনে। কিছুক্ষণের মধ্যে লেখাও হয়ে যায়;-


সরিষার খেত দুইধারে তার রেল চলে ঝিক ঝিক
তারি সনে জল বিল অভিরাম দোয়েল কোয়েল পিক,
ঘূর্ণিত সব ঘর বাড়ি আর বৃক্ষ লতায় তরু
পিছে চলে যায় হিলায় দুলায় কৃষাণ, খেতের গরু।


আল পাড়ে তার আলগোছে রয় দেখেছি নয়নে তারি
পারি নাই মন সাধিতে সে তার, আগে চলে রেল গাড়ি।
উড়ে চলে মন সুদূর বিহার মনে পড়ে কত কথা
হৃদয় বাহিত সে নদ তাহায় ভরে আছে শত ব্যথা।


বালকের দল বলাকা সমূহ জলাশয়ে সারি সারি
তৃষিত হৃদয়ে হেরিলাম মন ছুটে চলে রেল গাড়ি।
তাল গাছ সার খেজুর ও বট, রয়েছে আকাশ ধরি
বাঁশঝাড় তার পাতার বাহার হৃদয় দিতেছে ভরি।


আমি কবি মন হই আনমন অপলকে চোখ চায়
যেমতি কনকে নারী তার প্রাণ প্রবলে সেথায় ধায়।
ধরিবারে তারে নাহি নাহি পারে রেল ছুটে চলে বেগে
পুলকিত হই কভূ ব্যথার সে দোল, কবিতায় নেই মেগে।


লেখা শেষ হলে সেই ভদ্রলোক কে লেখাটি শোনালে তিনি বলে ওঠেন, "বা! আপনি তো গুণীজন দেখছি", আমি বলি "আমার বিবি জানে আমি কত বড় গুণীজন!!" যাই হোক আলাপচারিতায় আমার লেখা কয়েকটি কবিতাও তিনি শোনেন। তিনি দার্জিলিং এর একটি হোম স্টের মালিক ছিলেন। তারাপীঠ দর্শণের অভিসারে তিনি রামপুরহাট স্টেশনে নেমে যান। যাবার আগে বলে গেলেন, "সঞ্জয়দা চলি তা'লে", সাথে যোগ করে গেলেন,"মানুষের জন্য লিখবেন"। ভালো লাগলো।


পরের দিন দুপুর একটার মধ্যেই আমার কাজ শেষ হয়ে যায়। দুপুরে সারে তিনটা নাগাদ তার ঘরে বেশ সুন্দর পাঠার মাংস সহযোগে ভোজন ও হয়। আমি অনতিদূরে একা তার ই আর একটা ছোট ফ্ল্যাটে ছিলাম। দৌ-প্রাহরিক ভোজন শেষ হলে ঘন্টাখানেক পর সে সস্ত্রীক গাড়ি নিয়ে মার্কেট বেড়িয়ে পড়ে আর আমি বিশ্রামের উদ্দেশ্যে আমার ফ্ল্যাটের অভিমুখে রওনা দেই। জায়গাটা বেলেঘাটা। পথে বেলেঘাটা ক্যানেলের উপড়ে দাঁড়িয়ে পড়ি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে। ক্যানেলের রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম। হটাত খেয়াল হলো ক্যানেলের জল কুচকুচে কালো। আনমনে ভাবছিলাম অনেক কিছু। হটাত দেখলাম এক ঝাঁক কাক সেই জলে এসে কাকস্নান শুরু করে দিল। মনে হলো কিছু লিখতে হবে। রেলের লেখা কাগজটা তো পকেটেই ছিল আর এক পিঠ সাদা। রেলিং এ কাগজ রেখে কষ্ট করেই লিখতে শুরু করি। লিখতে লিখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে।


ক্যানেলের ধার উঁচু তারি পার জল তারি ঘন কালো
বিকালের রোদ ঝিকিমিকি তাপ গায়ে মেখে দেয় আলো।
বায়সের দল ঝটপটি তার , ঝাঁপাঝাঁপি করে জলে
এক নয় দুই পুরো এক ঝাঁক আসিয়াছে দলে।


আমি ভাবি মন শোধনেতে স্নান এ জল যোগ্য কিবা!
নালা খাল বেয়ে শত কত বিষ, মৃতপ্রায় আজি দেবা।
নিধনে সে ধন করে আরাধন গণে গণে আজি পাপী
বহিছে শিওরে আজি কী সে তাই, ধ্বংসের অভিশাপ-ই!


বারি সে বরুণ আজিকে করুণ হলাহলে তার গতি
কাঁদিছে সে খাল নীরবো নিনাদে শুনিছে কবির প্রীতি।


তবুও সে খাল নাই অভিমান তার-সেচনে সে দান করে
উজলা কনকে ভরে দিতে মন কৃষকের ঘরে ঘরে।
ওরে কর রে সে পণ করিতে আপন, বারি তার খাল সনে
পূজিতে তাহারে সে বারি তার ক্ষমা দে রে বিষ দানে।


লেখা শেষ হলে প্রিয় কবি শ্রী গৌতম রায় মহাশয় কে দুটো লেখাই শুনিয়েছিলাম মোবাইল কলে।


যাই হোক গতকাল রাতের দার্জিলিং মেলে আমি ফিরে এসেছি আর তিনি তার কাজের জন্য সেখানেই থেকে গিয়েছেন।কষ্ট করে পাঠ করবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইল।