আমার একটা মাটির পুতুল ছিল
দেখতে ঠিক ঈশ্বরের তৈরি মানুষের মতো।
হাত ছিল, পা ছিল, নাক ছিল, মুখ ছিল
আরো ছিল কাজল কালো দু’টি চোখ
প্রতিদিন যাকে নিয়ে খেলাতেই ছিল আমার সুখ।
দর্জির থেকে টুকরো কাপর এনে শাড়ি পড়াতাম
ছোট ছোট গয়না দিয়ে পুতুলটাকে সাজাতাম,  
নতুন নতুন বর দেখে প্রতি সপ্তাহে বিয়ে দিতাম,
বরের বাড়ি চকলেট, মিষ্টি কতোকি নিতাম।


বিয়ে দিয়েও পুতুলটাকে নিজের কাছেই রাখতাম,
হাসতাম...সেই সময়টায় প্রাণখুলে হাসতাম...।


রংটা কালো ছিল, তাই নাম রেখেছিলাম নিশি
জীবনের প্রথম ভালো আমি নিশিকেই বাসি।


হঠাৎ একদিন ভেঙ্গে গেল তার কাজলা বাম আঁখিটা!
আমায় নিতে সত্যিই এলো চার বেহারার পালকিটা।
আর নিয়ম ভেঙ্গে পুতুলটাকে সঙ্গে নিতে পারলামনা
কোনো সইয়ের কাছেও রেখে যেতে পারলামনা।
কারণ, পুতুলটার বাম নয়নটা ভাঙ্গা বলে কেউযে আর
আমার মতো তাকে ভালোবাসেনা...।


অসহায় আমি-
না পারি রেখে যেতে, না পারি সঙ্গে নিতে।
শেষে ঈশ্বরের নামে তাকে শীতলক্ষ্যায় বিসর্জন দিয়ে
মাটির ঘর ছেড়ে চলে এলাম ইট-পাটকেলের ভীরে।


হাসতে পারিনা, আজ আর প্রাণখুলে হাসতে পারিনা...
কি করে হাসব? আরযে পুতুলের বিয়ে দেয়া হয়না,
টুকরো কাপড়, গয়না দিয়ে কাউকেযে সাজানো হয়না
চকলেট-মিষ্টি-সন্দেশ নিয়ে কারো বাড়ি যাওয়া হয়না,
অমন করে কাউকে যে আর ভালোইবাসতে পারিনা।


ওই মাটির পুতুলটা-
আজো আমার স্মৃতিতে ভেসে বেড়ায়
প্রতিটা নির্ঘুম নিশিতে কান্নার করুণ সুরে
আমায় কাঁদায়...