সবাগ-নির্বাগ
এস.কে.শুভ
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২১।


দৌড়া-দৌড়ি, ছোটা-ছুটিতে উত্তেজিত ভীতকর রাস্তা
দুই ধারের গাছগুলোতে নৌকা বাধার মত দাড়িয়ে আছে যান্ত্রিক গাড়িগুলো।
লোকালয়ে হঠাৎ বারুদ পোড়ার গন্ধ পেয়ে মাথার চুল তুলছে এক বৃদ্ধ
যুবকদের আত্মবলিদানের মত টগবগ করা রক্তগুলো সান দেওয়া চকচকে তরবারি উঁচিয়ে
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
এক কিশোরী রিক্সা ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে কোন এক গলিতে আত্মগোপন করতে চাইছে
স্কুল পড়ুয়া শিশুর কান্না কালিঝোলে আর্তনাদ করছে
কোন কোন শিশু তাদের বাবা কিংবা মা অথবা কোন সম্পর্কের ব্যক্তির হাত ধরে পালিয়ে যাচ্ছে রাস্তা হতে।
প্রাণ বাঁচাতে চাইছে না রাস্তার কালো কুকুর, সে খেলওয়ারহীণ মাঠে গোল দেওয়ার মত দৌড় দিচ্ছে।
দূরের ভবনগুলো থেকে জানালা দেওয়ার আওয়াজ আসছে।
কিছুক্ষণ পর স্তব্ধ হল চারপাশ।
যেন শবযাত্রা গেল কিছুক্ষণ আগে।
শুধু পড়ে থাকল কারো শার্ট, কারো স্যান্ডেল-জুতা অথবা বাজারের ব্যাগ।


হঠাৎ দূরথেকে কান্নার আওয়াজ-
বাঁচাও, আমাকে হাসপাতাল নিয়ে যাও!
বুকফাটা আর্তনাদ শুনে মনে হচ্ছিল, কার যেন আত্মা বের হচ্ছে দেহ হতে।
এই সময় একটা এ্যম্বুলেন্স দরকার!
কে ডাকবে, কে সাহয্য করতে আসবে। সাহসহীণ সময়ে অসহায় সকল মানুষ।
কেবল একটা কুকুর আছে।


জরুরী হর্ণ বাজিয়ে এল পুলিশগাড়ি।
তথাকথিত সাজোয়া অভিযান হচ্ছে শুণ্য মাঠে।
একটা লাশ, আর একটা আহত, আর একটা নিস্ত্যেজ মানুষ।
ধরাধরি করে হাসপাতালে নিচ্ছে পুলিশ।
সাংবাদিকদের ক্যামেরা চলল পুলিশের ছত্রছায়ায়।
সংগ্রহ করল কয়েক কলম।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাত, পুলিশের সাক্ষাতকার ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুলিশ সংগ্রহ করছে নমুনা। প্রস্তুতি হচ্ছে মামলার।
ঘিরে ফেলা হল চারিদিক। নো-এন্ট্রি।


প্রায় ১ ঘন্টা পর একটা মিছিল।
বিচার চাই, বিচার চাই। খুনিদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।
ব্যানারহীণ মিছিলটি কয়েক দফার পর
রক্তাক্ত মানুষের ছবি সংযোজিত হল ব্যানারে।
দিনটা সন্ধ্যা হল।
রাতে গণমাধ্যম দাপিয়ে এল কভারেজ,
আলোচনায় বসল এলিট। সংলাপ চলল।
তিন থেকে চারদিনপর মোটিভ এল
সন্ত্রাসী হামলা দখলদারিত্বের।
তারপর এল রাজনীতি, ধর্মনীতি,
তারপর বিশ্লেষণ, সংবিধান, আইন, আন্তর্জাতিকতা, মানবাধিকার।
সপ্তাহ ব্যাপি সংশয় ও ভয়।
চলছে তদন্ত, ধরাও পাকরাও, ২০০ জন সন্দেহজনক আসামী।
আদালত, রিমান্ড ইত্যাদি ইত্যাদি।


আবার সংবাদ হল নারীর বস্ত্রহরণ, বিকৃত যৌণাচার ও হত্যা
এবং অন্যান্য ঘটনা।
আবার ডামাডোল পড়ল নাগরিক অধিকার নিয়ে।
এবং মাটিতে চাপা পড়ল চাক্ষুস সেই কভারেজ।


এভাবেই ঘটনার পর ঘটনা, বিষয়ের পর বিষয়।
বেমালুম এবং বে-হিসেবী।
কত কত রাস্তা, বাড়ি, গ্রাম, প্রতিষ্ঠান, অঙ্গণ উত্তপ্ত হয়
সবই চাপা পড়ে, ধুলো জমে, সংস্কার ও সমাধান হয় না।