বাংলা কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটি অনন্য শাখা | বাংলা কবিতা যেমন প্রতিনিয়ত বাংলা সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করছে তেমনি বাংলা সাহিত্যের গভীর তর চর্চা বাংলা কবিতাকে আরো পরিশীলিত করে, তার গুণগত মানের উৎকর্ষ ঘটায় |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে উচ্চ তর শিক্ষার কতটুকু সুযোগ রয়েছে এ ব্যাপারে কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম | তথ্য খুবই সীমিত পাচ্ছি , যা মূল ধারণা পেতে সাহায্য করছে না |
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে জড়িত আছেন, এমন কেউ এ বিষয়ে সাহায্য করলে বাধিত হবো |
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা | ভালো থাকুন সকলে |
ও আমার দেশ
আমেরিকায় বাংলা পড়ান শামিম
মুন্সীগঞ্জের ছেলে আহমেদ শামিম। স্কুুলবেলা কেটেছে সীতাকুণ্ডে। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য। এখন আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে বাংলা পড়ান। ই-মেইলে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহনাফ সালেহীন
২১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০
আমেরিকায় বাংলা পড়ান শামিম
অস্টিনে একুশে ফেব্রুয়ারি
ইউটি (ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস) অস্টিনের বাংলা ভাষা কোর্স নিয়ে কিছু বলুন।
আমি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগে বাংলা প্রভাষকের চাকরি নিয়ে অস্টিনে আসি ২০১৫ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভিন্ন অন্য একটি ভাষা রপ্ত করতে হয়। আরো কিছু এশীয় ভাষার সঙ্গে এখানে তাই বাংলাও চালু আছে এবং চাহিদা মোটামুটি আছে। মোট সাতটি বাংলা কোর্স তালিকভুক্ত আছে আমাদের বিভাগে। এর মধ্যে দুটি প্রাথমিক, দুটি মাধ্যমিক ও দুটি উচ্চতর বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং একটি বাংলা সাহিত্য পরিচয়। সাধারণত প্রাথমিক-মাধ্যমিক শ্রেণিতেই বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। গত দুই বছরে চারটি শিক্ষাপর্বে গড়ে ১২ জন করে প্রাথমিক শিক্ষার্থী পেয়েছি আমি।
আপনার ছাত্র-ছাত্রীরা কেমন?
অনেক রকম ছাত্র-ছাত্রী পাই। যেমন নৃবিজ্ঞান, অর্থনীতি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, মধ্যযুগীয় সাহিত্য, ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত ইত্যাদি বিষয়ে যারা গবেষণা করছে, তাদের অনেকের জন্যই বাংলা শেখাটা আবশ্যক। আবার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহীরা শিখতে আসছে যোগাযোগটা সহজ করতে। আরেক দল আছে, যাদের বাবা কিংবা মা বাঙালি অথবা উভয়েই বাঙালি; কিন্তু বাংলাটা শেখা হয়নি। এই দলটাকে আমরা বলি ঐতিহ্য শিক্ষার্থী। এশিয়ার অন্য দেশেরও কিছু শিক্ষার্থী আছে, যারা বাংলাও আয়ত্তে আনতে চায়।
বাংলার কদর ইউটি অস্টিনে কেমন?
বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হিন্দি বা উর্দু বেশি শিখতে চায়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিচারে বাংলার অবস্থান মালায়ালাম ভাষার কাতারে। এর একটা কারণ বৃত্তি অপ্রতুল। যেমন অনেক চীনা প্রতিষ্ঠান মান্ডারিন ভাষা শেখার জন্য শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়। কোরিয়ান, জাপানিজ ভাষার ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। হিন্দি বা উর্দু ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্যও বৃত্তি আছে। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী দরকার। তাই ভাষাটা জানা থাকলে যোগাযোগ সহজ হয়; কিন্তু বাংলার শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো এমন বৃত্তি সহজলভ্য নয়। তবে আমরা আশা করি, কয়েক বছর চালিয়ে নিতে পারলে হয়তো অনেক সুযোগ তৈরি হবে।
কডা ভাষা নিয়ে গবেষণা
আপনি তো রাজশাহীর কডা ভাষা নিয়েও কাজ করছেন?
হ্যাঁ, দেখুন বাংলাদেশেই বাংলা ছাড়াও আরো ৪০টির বেশি ভাষা আছে। সেগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই বিপন্ন (এনডেনজার্ড)। এগুলোর মধ্যে একটি মারাত্মকভাবে বিপন্ন ভাষা হলো রাজশাহীর কডা ভাষা। এটা মুণ্ডা পরিবারের একটি ভাষা। এই ভাষায় কথা বলে এমন প্রায় ১৪০০ লোক আছে বাংলাদেশে। ভারতে কডাভাষীর সংখ্যা চুয়াল্লিশ হাজারের মতো। কিন্তু এ ভাষার ব্যাকরণ রচিত হয়নি এখনো। ১৯০৬ সালে গ্রিয়ারসনের (জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন, ১৮৫১-১৯৪১, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে ছিলেন) লিঙ্গুইস্টিক সার্ভেতে এ ভাষার কথা রয়েছে। আমার পিএইচডি গবেষণার বিষয়, কডা ভাষার ধ্বনি ও রূপতত্ত্ব। মজার ব্যাপার হলো, কডা ভাষার কথা আমি প্রথম শুনি আমার এমএ থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক জুলিয়েট ব্লেভিন্সের কাছে। তিনি একজন খ্যাতনামা ধ্বনিতত্ত্ববিদ এবং নোম চমস্কির ছাত্রী।
নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটিতে
নিউ ইয়র্কের এনডেনজার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যালায়েন্সের (ইএলএ) সঙ্গেও তো আপনি যুক্ত।
কডা ভাষা পদ্ধতিগত সংরক্ষণের ব্যাপারে ইএলএর সহায়তা নিচ্ছি। ইএলএর সঙ্গে যুক্ত সিটি ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ড্যানিয়েল কাউফম্যান এবং কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক রাফায়েল ফিংকেল এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা ভাষা বর্ণনার কাজে ভাষাবিজ্ঞানীদের সহায়তা করবে। এ সফটওয়্যারের নিরীক্ষামূলক সংস্করণে আমরা যে কয়টি ভাষা ব্যবহার করছি, তার মধ্যে কডা একটি। ইএলএ মূলত বিপন্ন ভাষার ভাষাগোষ্ঠীকে তাদের নিজ নিজ ভাষার ব্যাকরণ, অভিধান ও শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে সহযোগিতা দেয়। এতে ভাষাগোষ্ঠী ও ভাষাবিজ্ঞান উভয়ে উপকৃত হয়। কডার কাজ বেশ অনেক দূর এগিয়েছে। শিগগিরই আমরা সফটওয়্যারটি সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করতে পারব।
আপনি ইউটি অস্টিনে আসার আগে কোথায় কাজ করতেন?
অস্টিনে আসার আগে নিউ ইয়র্ক সিটি ও নিউ ইয়র্ক রাজ্যের জন্য বাংলা শিক্ষা উপকরণ তৈরিতে কাজ করেছি বেশ কয়েক বছর। এ কাজে আমাকে সহযোগিতা দিয়েছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত আমার বন্ধু নাজমুল সুলতান। নিউ ইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের ছাত্র হওয়ার সুবাদে লাগুয়ার্ডিয়া কমিউনিটি কলেজে আমি ভাষাতত্ত্বও পড়িয়েছি। সে সময় ওই কলেজে একবার বাংলা সাহিত্য পড়ানোরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রবাসে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে শিক্ষকতা করার সুপ্ত বাসনা আমার আগে থেকেই ছিল। তাই রাজি হতে দেরি করিনি। সেখানে আমার শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ২২ জন। আমি সিলেবাসে বাংলাদেশের নব্বই দশকের কবিতাও যুক্ত করেছিল