। বিদেশী।


শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে।
আতংক না আগামীর হুমকি, বুঝছি না।
রোজ সকালে উঠেই হুড়মুড় করে  গোপন সিন্দুক খুলে দেখে
নিচ্ছি সবেধন নীলমণি পরিচয়পত্রটি আছে কিনা ,
আমি অমুক চন্দ্র তমুক, আসলে রাষ্ট্রের কাছে তো একটা নম্বর কেবল,
যা হারিয়ে গেলে জলজ্যান্ত আমার অস্তিত্বই বিলীন হবে।
দুধওয়ালা দুধ দেবে না, সবজিওয়ালা না বলে দেবে মুখের ওপর,
হাসপাতাল শপিং মল বা শ্মশানঘাট, কেউ আসতে চাইবেনা নেইমানুষের সংস্রবে।
পথে বেরোলে ভয়ে থাকি, যদি দুম করে ভূমিপুত্রত্বের প্রমাণ চায় কেউ।
যদি পুরসভা বলে বসে, প্রমাণ দাও, তোমার ঠাকুর্দা ছিলেন      ওই নোনা ওঠা বাড়ির মালিক,
বারান্দায় ওই আরামকেদারায় তোমার বাবা বিশ্রাম নেন, ওই কুলুঙ্গীতে তোমারই কুলদেবতা,
যদি হঠাৎ  মাঝরাতে এক প্লেটুন উর্দি দরজায় কড়া নেড়ে চেঁচিয়ে ওঠে
‘ প্রমাণ দাও তুমি প্রপিতামহের থেকে এই দেশের  নাগরিক!’


এটুকুও সামলে নিতে পারবো এখন, সাবধান হয়ে গেছি খুব।
পরিচয়পত্রটা তালাচাবি দিয়ে রাখি কড়া পাহারায়,
ভাবছি সি সি টি ভি লাগাবো এবার, কেউ যদি ছক কষে আটঘাট বেঁধে,
শত চেষ্টাতে তার অনাগরিকত্ব শাপ ছোঁবে না আমায়।


তবু মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে , ধড়মড় জেগে উঠি কুলকুল ঘেমে।চোখ বুঝলেই সে স্বপ্ন তাড়া করে।
আমি দেখি , দেশের  প্রতি কোণা থেকে,
প্রতি হৃত অরণ্য, জবরদখল শহর আর গণকবরের ওপর ওঠা গ্রাম ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছেন অজস্র মানুষ,
কালো কালো আদিবাসী, সাঁওতাল, কোল , ভীল, ওঁরাও , আরও কত নামহীন মুছে যাওয়া জাতি ,
তাঁরা আদিম বল্লম আর পাখির পালক লাগানো তিরধনুক বাগিয়ে হুংকার দিচ্ছেন,
‘ বেরো শালারা সব, মারাং বুরুর দিব্যি, এদেশের মালিক আমাদের পূর্বপুরুষ!’


আমি যে আদতে বিদেশী, সেই কথা মনে করে শিরদাঁড়া বেয়ে নামে ঠান্ডার স্রোত...


আর্যতীর্থ