ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৭, ভাগ-৬৭> – কবিতার নানা রূপ (বিদেশি ছন্দবন্ধ)
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
-------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ – তের্জারিমা
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি পল্লব চৌধুরী মহাশয়কে।              
------------------------------------------------------------------------------
তের্জারিমা :
তের্জারিমা শব্দটি ইতালীয়। ইংরেজিতে এর অর্থ দাঁড়ায় থার্ড রাইম। বাংলায় তিন পঙক্তি বিন্যাসের ধারাবাহিকতামূলক কবিতা।
এই কবিতার মিল বিন্যাস ক খ ক/ খ গ খ/ গ ঘ গ-- এইরকম।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এই তিন পঙক্তির স্তবকবন্ধে প্রথম ও তৃতীয় পঙক্তিতে মিল থাকে এবং মিলহীন দ্বিতীয় পঙক্তির সাথে পরবর্তী স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় পঙক্তির মিল বিন্যস্ত হয়। এবং এই অনুক্রমে অগ্রসর হয়। প্রথম ইংরেজ কবি হিসেবে জিওফ্রে চসার তার Complaint to His Lady কবিতায় তের্জারিমা-র প্রয়োগ করেন। তারপর মিল্টন, বায়রন, শেলি, হার্ডি, অডেন, এলিয়ট, ফ্রস্টসহ অনেকেই এই ফর্মে কাব্য লিখেছেন। তের্জারিমা  শেষ হয়--একটি একক পঙক্তি বা কাপলেটে। শেলির Ode to the West Wind এ কাপলেট এন্ডিং-এর উদাহরণও পেলুম।

"O wild West Wind, thou breath of Autumn's being, (a)
Thou, from whose unseen presence the leaves dead (b)
Are driven, like ghosts from an enchanter fleeing, (a)

Yellow, and black, and pale, and hectic red, (b)
Pestilence-stricken multitudes: O thou, (c)
Who chariotest to their dark wintery bed (b)

The winged seeds, where they lie cold and low, (c)
Each like a corpse within its grave, until (d)
Thine azure sister of the Spring shall blow (c)

Her clarion o'er the dreaming earth, and fill (d)
(Driving sweet buds like flocks to feed in air) (e)
With living hues and odours plain and hill: (d)

Wild Spirit, which art moving everywhere; (e)
Destroyer and preserver; hear, oh, hear! (e)"


বাংলায় প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল, জীবনানন্দ এই স্তবকরীতি ব্যবহার করেছেন।  জীবনানন্দ দাশ-এর  "শকুন"কবিতাটি এই রীতিতে লেখা।

"মাঠ থেকে মাঠে মাঠে —সমস্ত দুপুর ভরে এশিয়ার আকাশে আকাশে
শকুনেরা চরিতেছে;মানুষ দেখেছে হাট ঘাঁটি বস্তি —নিস্তব্ধ প্রান্তর
শকুনের;যেখানে মাঠের দৃঢ় নীরবতা দাঁড়ায়েছে আকাশের পাশে

আরেক আকাশ যেন —সেইখানে শকুনেরা একবার নামে পরস্পর
কঠিন মেঘের থেকে —যেন দূর আলো ছেড়ে ধুম্র ক্লান্ত দিক্‌হস্তিগণ
পড়ে গেছে —পড়ে গেছে পৃথিবীতে এশিয়ার ক্ষেত মাঠ প্রান্তরের ‘পর

এই সব ত্যক্ত পাখি কয়েক মুহুর্তে শুধু —আবার করিছে আরোহণ
আঁধার বিশাল ডানা পাম্‌ গাছে —পাহাড়র শিঙে শিঙে সমুদ্রের পারে;
একবার পৃথিবীর শোভা দেখে —বোম্বায়ের সাগরের জাহাজ কখন

বন্দরের অন্ধকারে ভিড় করে,দেখে তাই —একবার স্নিগ্ধ মালাবারে
উড়ে যায় —কোন্‌ এক মিনারের বিমর্ষ কিনার ঘিরে অনেক শকুন
পৃথিবীর পাখিদের ভুলে গিয়ে চলে যায় যেন কোন্‌ মৃত্যুর ওপারে;

যেন কোন্‌ বৈতরণী অথবা এ জীবনের বিচ্ছেদের বিষন্ন লেগুন
কেঁদে ওঠে…চেয়ে দেখে কখন গভীর নীলে মিশে গেছে সেই সব হূন।"


***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছন্দ – ড অমরেন্দ্র গণাই
                    ২) ছন্দ কবিতা অনুশীলন (ফেসবুক)
                    ৩) সহিদুল ইসলাম রিপন (ফেসবুক)
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করবেন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।