ছন্দ ও কবিতার পাঠ –২৫ – ছড়ায় ছন্দ, ছন্দে ছড়া
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি আর্যতীর্থ মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  <পর্ব-৩, ভাগ-২৫> ছড়ায় ছন্দ, ছন্দে ছড়া
------------------------------------------------------------------------------
এই পর্বের পূর্বের কিছু আলোচনায় আমরা বেশ কিছু কবিতা ও ছড়া উল্লেখ করেছি। আজ স্বরবৃত্ত ছন্দের সাহায্যে কীভাবে ছড়া লেখা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।
স্বরবৃত্ত কে বলাই হয় ছড়ার ছন্দ। ছড়ার মধ্য দিয়েই এই ছন্দের জন্ম হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। অনেক অনেক কাল আগেই এই সব ছড়া-ছন্দের প্রচলন দেখে আসছি। মানুষ যখন ঠিকমতো লিখতে পড়তে শেখেনি তখন থেকেই নানা বিনোদনের একটি হয়ে ওঠে ছড়া। ছড়ার কবিতাকে ছন্দ দিয়ে বলা। তবে এই ছন্দ জেনে বুঝে, ছন্দের বিদ্যাবিজ্ঞান জেনে নয়। একান্তভাবে মনের স্বাভাবিক ছন্দবোধ থেকে এর সৃষ্টি। যেমন-
আয় বৃষ্টি/ ঝেঁপে
ধান দেব/ মেপে
কচুর পাতা/ করমচা
যা বৃষ্টি/ ধরে যা।
আবার
বৃষ্টি পড়ে /টাপুর টুপুর /নদেয় এল /বান
শিবঠাকুরের/ বিয়ে হবে /তিন কন্যা /দান
শুধু ছড়া কেন, সেকালের প্রবাদপ্রবচন, ধাঁধাঁ, সবই এই ছন্দের চালে দেখতে পাওয়া যায়।
খনার বচন থেকে-
"কলা রুয়ে /না কেটো পাত
তাতেই কাপড়/ তাতেই ভাত"
ধাঁধাঁ থেকে-
"বন থেকে/ বেরুলে টিয়ে
সোনার টোপর /মাথায় দিয়ে"
ছড়া-ছন্দ দুটোরই জন্ম একসাথে। প্রাচীন মানুষের মুখে মুখে। যাই বলা ছন্দ করে বলা। ছড়া বানিয়ে বলা। গুছিয়ে বলা। শ্বাসের ঝোঁকে ঝোঁকে কথাগুলিকে সাজিয়ে বলা। সেই বলা কথা ধরা পড়ল কানে। কান থেকে মনে। ছন্দের মধ্য দিয়ে ছড়ার জন্ম হল। ছড়ায় সাথে ছন্দ আর ছন্দের সাথে ছড়া। এমনভাবে মিশে গেল একটি থেকে আর একটিকে আলাদা করা যায় না।
ছড়া লিখতে গেলে তাই ছন্দ চাই। ছ ন্দ ছাড়া অনেকেই ভালো ক বিতা লিখে দিতে পারেন, কিন্তু ছড়া নয়। ছন্দ শিখলেই যে একজন ভালো ছড়াকার হবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। ভালো ছড়া লেখা মোটেই সহজ নয়। ‘যাহা সর্বাপেক্ষা সরল তাহা সর্বাপেক্ষা কঠিন'।
কবিতার মতো ছড়াতেও ছন্দ কথাগুলিকে বেঁধে ফেলবার একটা কায়দা। একটি প্রচলিত ছড়া আবার পাঠ করে নিই।
"ছেলে ঘুমাল /পাড়া জুড়াল
বর্গী এল /দেশে;
বুলবুলিতে /ধান খেয়েছে
খাজনা দেব /কিসে"


স্বরবৃত্তের আরও কিছু ছড়া পাঠ করে নিই।


১) দিন চলে যায় /গুন গুনিয়ে /ঘুম পাড়ানীর /ছড়া
শান বাঁধানো/ ঘাটের ধারে /নামছে কাঁখের /ঘড়া
আতা গাছের/ তোতা পাখি /ডালিম গাছের/ মৌ
হীরে দাদার /মড়মড়ে থান/ ঠাকুরদাদার /বউ
                              দিন চলে যায়/ রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর
২) আয়রে ময়ুর/ আয়
প্যাখ্যাম ধরে /নেচে নেচে
যাদুর কাছে /আয়!
আসতে যেতে /ঘুঙুর বাজে
সোনার নূপুর /পায়।
             ময়ূর/ যোগীন্দ্রনাথ সরকার
৩) শুনতে পেলাম /পোস্তা গিয়ে
তোমার নাকি /মেয়ের বিয়ে?
গঙ্গারামকে /পাত্র পেলে?
জানতে চাও সে/ কেমন ছেলে?
              সৎপাত্র/ সুকুমার রায়
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছড়ায় ছন্দ - প্রণব চৌধুরী  
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।