ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৫, ভাগ-৪৮> – অক্ষরবৃত্ত ছন্দের সুবিধা
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি তমাল ব্যানার্জি মহাশয়কে।            
------------------------------------------------------------------------------
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ প্রাচীন পয়ার জাতভুক্ত। তবে, পয়ার ৮+৬=১৪ মাত্রার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আজ এই ছন্দে লেখার বেশ কিছু সুবিধা তুলে ধরা হল।
১) অ/আ-কার, ই-কার, এ- কার, ও- কার, উ-কার কে কবিগণ অনেক সময় এক বা দুই মাত্রা ধরেছেন। আসলে এগুলি অনেকটাই গীতপ্রধান; তাই অ- স্বরের হসোচ্চারণ অনুপস্থিত। যেমন-
"কায়া তরুবর/ পঞ্চবি ডাল" (৮/৬)
আবার,
"দাঁড়াও হে পথিক/ বর জন্ম যদি" (৮/৬)
২)  নির্দেশকযুক্ত প্রথম হসসিলেবল দুই মাত্রা হবে।
যেমন- লোকটা, এইটা, বইখানা; সমাসবদ্ধ শব্দেও ২ মাত্রা হবে। যেমন- গোলমাল, ঝরঝরে, চিকচিক, কাশবন। কবিতায়-
"তুলতুলে গালখানি/ টুকটুকে লাল"
বা,
"গামছায় জল ভরি /গায়ে তারা ঢালে"
বা,
"একধারে কাশবন /ফুলে ফুলে সাদা। "
বা,
"মেয়েদের পদবিতে গোলমাল ভারি।"
৩) মাত্রা সংখ্যা ৮+৬ ও এর অধিকের যোগফল।
৪) যৌগিকধ্বনি সবসময় ২ মাত্রার হয়।
৫) পুরোপুরি শুদ্ধ না হলেও শুধু বর্ণ গুনেও এর মাত্রা নির্ণয় করা যায়।
৬) এই ছন্দের মাত্রা জোড়ে-জোড়ে বা বিজোড়ে-বিজোড়ে হলে ভালো হয়।
৭) ভারি শব্দ আর ধীর লয়।
৮) এখানে চোখের হিসাবনিকাশই আসল কথা। এই প্রসঙ্গে ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন-
"বিজোড়ে বিজোড় গাঁথো
জোড়ে গাঁথো জোড়।"

***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছন্দ শেখার কলা কৌশল- হাসান রাউফুন।      
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।