খাট - প্রথম অংশ।
এই খাটে তোর বাবা মরেছিল
এই খাটে ম'ল মায়;
এই খাটে তোর বড়ো ভাই ম'ল
এ খাট রাখিব নাই।
অনেক যতনে খাটখানি ছিল
আমার ঘরের মাঝে;
কত আনন্দে কাটিত সময়
খাটখানি লয়ে সাথে।
সারাটি বাড়িতে একখানি খাট
একটি বসার ঠাই;
সকলে আসিত আমোদে জুটিত
ছেলে-বুড়ো সব্বাই।
খাটখানি নিয়ে কত কথা আজ
মনে পড়ে নীরালায়;
ওর বাপে ওই খাট করেছিল
কত টাকা খরচায়।
সারাটি জীবন কেটে গেছে তার
মাটির ও বিছানায়;
কোনোদিন জানি ভালো করে ছেলে
ঘুমাতেই পারে নাই।
শেষকালে তাই বেঁচে গাছগুলি
সেগুনের গাছ দুটা;
শখ করে তাই খাট করেছিল
শুতে শেষ দিন ক'টা।
খাট - দ্বিতীয় অংশ।
একদিন তার কী যে হল জ্বর
সেই যে খাটেতে শুলো;
মহাঘুমে তার এ শেষ বিছানা
এই তো কপালে ছিল।
কে জানিত তার এই পরিণতি
নতুন খাটের 'পরে;
মানুষটি গেছে সেই কথা আছে
আমরা যে খাট জুড়ে।
দিন চলে যায়, স্মৃতি পিছু ধায়
স্মৃতি নিয়ে তোর মায়;
বাপের বিছানে এসে শুতে লাগে
এক শীত গেল নাই।
কী জানি কী হল বুঝিতে না পারি
এল বৈদ্য কবিরাজ;
সব কিছু তারে খাওয়ানো হল
মিথ্যা হল সব আজ।
কাশিতে কাশিতে সেই রাতে শোয়
মাথার কাছেতে জল;
মাঝ রাত্তিরে প্রাণ বুঝি যায়
আঁখি করে টলমল।
মায়ের সাথেই বিছানা পত্তর
খাটের সকল সারি;
নিয়ে যাওয়া হল মহাশ্মশানে
খান খান করে বাড়ি।
খাট - তৃতীয় অংশ
দুই ভাই তোরা কেঁদেই আকুল
কত বা তোদের বয়েস;
দুই ভাই রেখে বাপ-মায়ে বুঝি
গেছে না ফেরার দেশ।
আমার মনও যে ফেটেছে ভাই
তারা যে আমার প্রাণ;
ছেলের মৃত্যু কোন মায়ে বল
শক্ত রাখিবে নয়ন।
সব ভুলে যেয়ে তোরা বড়ো হলি
শেষ যে খেলার দিন;
দায়িত্ব কত বেড়েছে তোদের
আপন মনেতে ঋণ।
তারপর খাটে বড়োভাই শোয়
তুই শুতি মোর কাছে;
স্বপন দেখিয়া খাট থেকে তোর
বড়ো ভাই পড়িয়াছে।
সেই রাতে মোরা ধরাধরি করি
তুলেছি খাটের 'পরে;
আঁধার ঢাকিল সেই যে ঘরেতে
প্রদীপ জ্বলেনি দোরে।
বীরবিক্রম তাজাপ্রাণ তার
অকালে ঝরিয়া গেল;
কতই স্বপ্ন কত সাধ ছিল
আঁধারে হারিয়ে গেল।
শেষ ৬ স্তবক আগামীকাল।