সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ২৩ (০৪/১১/২০১৮) অংশের পর-


                ।।২৪।। মায়ের ভূমিকা
ওরা ভাইবোনে ভালো আছে সখী, যেমন থাকার কথা;
চিন্তা কোরো না, ভালোই থাকিবে হবে না অসুবিধা।
মনে পড়ে প্রিয়, আমরা তখন গোড়াবাজারেতে থাকি;
রান্নাঘরের জানালার পাশে ছোট্ট সে এক পাখি।
বর্ষার রাতে দমকা হাওয়ায় রান্নাঘরেতে টুনি-
তখন রাত্রি ন'টা বেজে গেছে মেয়ে যে বিপদ শুনি।
ঢুকেছে পাখিটি, পড়েছে বিপদে, বেরোনোর পথ নেই;
আমার মেয়ের কতই কান্না সবে তিন বছরেই।


কী করে যে পাখি মা'র কাছে যাবে এই বলে মেয়ে কাঁদে-
পাখি বুঝি আজ পড়ে গেছে এসে পরিস্থিতির ফাঁদে।
অনেক কষ্টে ধরেছি সে পাখি হাতের তালুর 'পরে-
সেই পাখি আমি ছেড়ে দিয়ে আসি মেয়েকেই কোলে করে।
রাতের সে পাখি মায়ের কাছেতে পৌঁছে গিয়েছে নিজে-
বর্ষাকালের বৃষ্টিতে বুঝি শরীর যে তার ভিজে।
ছোটো মেয়েটির সেই আবদার আজ মনে পড়ে সোনা-
সেদিনের সেই ছোট্ট কথাটি আমি বুঝি ভুলব না।


এখন তো মেয়ে ফেলিয়া এসেছে আরও পাঁচটি বছর
যত্ন পেয়েছে ভালোবাসা সাথে আপন মায়ের আদর।
সেই বুঝে গেছে মায়ের মনটি মায়ের ভূমিকা কত;
পাখিটি সেদিন মা- পেয়ে গেছে আজ মেয়ে বুঝি হত।
চিরতরে আজ হারিয়েছে মাকে তবুও কাঁদেনা মেয়ে-
লুকানো কান্না বেরিয়ে এসেছে হাসির মধ্য দিয়ে।
সেও বুঝি আজ টের পেয়ে গেছে এমন জীবন দিন;
পরিস্থিতির মাঝে আজ মেয়ে সেও তো সঙ্গীহীন।


প্রতি পদেপদে আসবে বিপদ অসহায় দিনরাত;
ত্যাগের সাথেতে জমেছে তাগিদ নেই কোনো অজুহাত।
বুঝে গেছে আজ জীবনের পথ দীর্ঘ অতিক্রম;
প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতি বুঝে গেছে বেশি-কম
সেই দুর্দিনে মনের কুটিরে লুকিয়ে কান্নাবোধ-
হাসিকেই তাই বেছে নেয় মন, জীবনের প্রতিশোধ।
হোক না সে হাসি শুকনো তাহার নকল খোলসে মোড়া-
তোমার মাঝেই তার সেই হাসি বেঁধেছে স্বপ্ন জোড়া।
               ---------
** চলবে।