সুফিয়া মমতাজ (কাব্যগ্রন্থ) : ০৯ (২১/১০/২০১৮) অংশের পর-


               ।।১০।। তোমার মায়ের কান্না
তোমার মায়ের সে কান্না কী গো! কান্না থামাবে কে-?
কত কথা বলে কেঁদেই চলেছে হারিয়ে তাহার মেয়ে।
আর পারে নাই আবেগে বিহ্বল চিরদুখী সেই মা-!
কোনো কিছুতেই পোড়া মনে আজ কোনো বাঁধ মানে না-।
তার মনে ওই শিশুবেলাকার সুফিয়ার কত কথা;
সুফিয়া নিভিল, যাতনা আসিল অন্তর ভরা ব্যথা।
ওই বুকে ধরে মানুষ করেছে বড়োটি করেছে তারে-
কান্নার মাঝে সেই সব স্মৃতি ফিরে আসে বারে বারে।


বাসে উঠে মেয়ে ফোন করেছিল- করতে বলেছে রান্না;
এভাবেই রোজ মা'র কাছে আসে থামেনা মুখের কান্না।
রোজকার মতো টিফিন গুছিয়ে রেখেছি কৌটা বাঁধা;
মেয়ে যে এলো না, আজ সকালেতে আমি অভাগি মাকসুদা।
মেয়ে রোজ আসে পরের বাসেতে আজ কেন আগে এল?
এই মনে আজ কত কথা আসে কি ব্যথা বুঝিতে পেল।
মায়ের চোখেতে মেয়ের মৃত্যু কঠিন-কঠিন বোঝা;
প্রশ্ন জবাব কোথা নেই বুঝি বৃথা উত্তর খোঁজা।


যদি বা থাকত কুয়াশায় ঢাকা, আসতো পরের বাসে-
এভাবে তো আর বিপদ হত না বাঁচত সে অনায়াসে।
কোথাও বা লেগে হাত পায়ে যদি আঘাত লাগত কিছু,
মনে বোঝাতাম, সারিয়ে নিতাম ছুটে তার পিছু পিছু।
ফুলের মতন মেয়েটি আমার ফুলের মতন সোনা-
এমন এ মেয়ে গ্রামে কয়জন হাতে যায় বুঝি গোনা
সুফিয়া আমার প্রাণ বুঝি ওগো আমার জীবন ধন;
হে আল্লা! খোদা! কী করিলে আজ অশ্রু বিসর্জন!


সোয়ামী আমার দিয়েছে তালাক সুফিয়া তখন ছয়;
সেইটুকু মেয়ে সাথে করে নিয়ে আমি কী জানি কী হয়!
জন্মের ভিটে ভুলে গেছে ও যে থেকেছে আমার কাছে
কত কথা আজ এই মন মাঝে সোহাগেতে তোলা আছে।
সকালের কালে মেয়েটি আসিত, স্কুল যেত এই পথে-
আমার ঘরেতে গোসল করিত প্রাতরাশখানি সাথে।
আমি তাই রোজ গুছিয়ে রেখেছি মেয়ের পথ যে দূর!
সুফিয়া যে আর আসবে না কভু এই ইসলামপুর।
               --------
** চলবে।