নদীর পাড়ে একা একা বসে থাকে খেয়া
সারাদিন কাজ তার এপার ওপার নেয়া,
কেউবা হাটে কেউবা মাঠে কেউবা যাবে কাজে
সবাইকে পার করে দেয় সে, সে থাকে মাঝে ।


রোদ বৃষ্টি ঝর তুফানে নেই ঘরের ঠিকানা
রাত দুপুরের নিঝুম আঁধার তার বড়ই  চেনা ।
ভরা জোয়ার ভাটার টানে বৈঠা হাতে গান ধরে
একূল ওকূল দুকূল দোলে ভাটিয়ালী সুরে ।


নববধূর চরনষ্পর্শ এ গাঁ থেকে ও গাঁয়ে
খেয়াঘাটের নজর এড়ায় কর্ত্যব্যের দায়ে ।
কেই বা জানে ভর দুপুরে যেজন গেল পার হয়ে
চিরতরে নিল বিদায় বিষ পানে দুর গাঁয়ে ।


গরু মোষ ছাগল ভেড়া আরো কত কি পন্য
পার হয়ে যায় একই ছন্দে দামী কি নগন্য ।
রাতের ডাকাত পরে প্রকাশ হৈ হৈ রৈ রৈ রবে
খেয়া ঘাটের ভাল মানুষ পার হয় নীরবে ।


উজান দেশের পচাগলা ভাটীর টানে চলে
খেয়া'র চোখে বিস্ময় জাগায় আবেগে তরী টলে ।
লন্ঠন আলোয় ঠাওর করে বর্ষার ভরা মরসুমে
প্রেমিক যূবক আলতো করে প্রেমিকার গাল চুমে ।


আবেগ ভূলে হিংস্র মানব মৃত্যুর হোলি খেলে
মানবতার বলি দিয়ে ঘরে ফেরে শক্তির উশৃঙ্খলে ।
জীবনের মান জানে না, না জানে বাচাঁর মূল্যায়ন
খেয়ার কড়ি ভূল করে না, জন্মান্তরের উপকরণ ।


জীবন পথের খেয়ার ধারে হিসেব নিকেস মিলায় বসে
শেষ ঠিকানার কড়ির অভাব, ওপাড়ের ঈশ্বর হাসে ।
বৈঠা হাতে খেয়ার মাঝি একা একা ভাটিয়ালী গায়
অপকর্মে কড়ির ব্যয়ে ঠাই মেলেনা স্বর্গদ্বারের নায় ।


খেয়াঘাটে খেয়ার মাঝি খাম খেয়ালে চালায় তরী
পারাপারের বৈঠা হাতে নিজের পারের খেয়াল ছাড়ি ।
জনম ভরা এপাড় ওপাড় দুপাড়ের সংযোগ করে
নিজে মরে মাঝ দরিয়ায় ভব সাগরের অগোচরে ।।


(এই কবিতাটি আমার সেই পুরোনো খাতার 'খেয়া' নামক কবিতার সম্পাদনা করে নতুন সংকলনে আজ প্রকাশ করলাম ।)