রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়


বাড়িত কায় আছেন বাহে?
হা বায় দেওয়ানির বেটি.....
রাগ না হন মা ও, মুই কোনো ফকির  ফাকরা নোহাও।
মোর কপালের দুঃখ এ আইজ তোমার দুয়ারোত টানি আইনছে মাও।
হা বায় মুইও তো পোদ্দার বাড়ির ছওয়া। মোর দাদো জমির উদ্দিন নাটিলায়। মানষি এক নামে চিনে হামাক।
হামার কপালখান তো পুড়িল দাদো মরির পরে।


হামারে বাড়ির খোলানোত বুড়া মেম্মারের ঘরের বড়ি। বাড়ির উত্তর পাকের জমিখান গারজোরে আইল ঠেইলতে ঠেইলতে দাবী কইল্লে নিজের কয়া।
সেইখান নিয়ায় নাগিল ঝগড়া।
মেম্বার হইল জন্মের প্যেঁচুয়া। জিলাপির প্যাঁচ তামানে উয়ার প্যাটোত। সারাদুনিয়া খালি ন্যাটা নাগে বেরায়।
দিলে মোর বাপের নামে কেস করি।
পাঁচ বছর থাকি ওমার সতে কেস খেলেয়া, জমি জিরাত যাগা হালের গরু তামানে শ্যাষ। মেম্বারের ঘরের বোলে উপরোত লোক আছে।
ওমাকে ধরি জেলোত দিল মোর বাপোক।
সেলা থাকি মুই কামলা খাটি খাও।
মুই কোন ফকির নোয়াও বাহে।


দেইখতে দেইখতে ডাঙার হইল মোর বেটি কুলসুম। পরীর মতোন দেইখতে ছওয়াটা। কেবল ভত্তি করি দিছুনু হাই স্কুলোত।
মেম্বারের বাউদিয়ে নাতিটার কুপ্রস্তাবোত রাজী না হওয়াতে, আইতের আন্দারোর ছওয়াটাক বেরকে নিগিয়া আধা-মরা কইল্লে বাহে ছয় সাত ঝনে মিলি।
কুলসুমের দেহার রক্তে বাঁশবাড়িখান ভাসি গেছিলো সেদিন।
তিনদিন থানার দুয়ারোত বসি থাকিয়াও  মোর কেস ন্যাকে নাই  ওসি সাইপ।
ওই ওমার উপরের লোকের কথাত।
এদি থানা পুলিশ আর হাসপাতাল কইত্তে কইত্তে রক্তশূণ্য হয়া মোর কুলসুম মোক ছাড়ি চির দিনের জন্যে চলি গেইছে মা ও.....
মুই কান্দং মোর ছওয়ার শোকোত আর পাড়ার মানষিলা মোক দেখিয়া হাসে, তামশা করে......
কয় মোর বেটি বোলে নষ্টা আছিলো,
মোর বেটির বোলে চরিত্র খারাপ...
তা হা বায়, বড় লোকের বেটিরঘর রাইতের আন্দারোত কারো সতে পালে গেইলে কয় বোলে হানিমুনোত গেইছে।
যতো দোষ আর দুর্নাম খালি কি গরীবের জন্যে বাহে??


হামার তো হাতে কইল্লে মুখে খায়।
মাস খানেক অসুখোত পড়ি আছুনু,
কাহো একনা দুয়ারোর ঢুলকি মারি দ্যাখে নাই মুই বাঁচি আছুং নাকি মরি গেছুং না খেয়া.....
হা বায়,
সরকার যে হাজার হাজার বস্তা চাউল ইলিফ দিলে, মুই কি দুই কেজি চাউল পাওয়ারও যৈগ্য নাই হং বাহে?
ইলিফ তো পায় চেয়ারম্যান, মেম্বারের ঘরের সাগাই শোদর, আর যায় ওমাক ভোট দিছে তায়,
হামার কপালোত ইলিফ টিলিফ নাই মা ও।
ইলিফের চাউলের বস্তা ডিগির পানিত ডুবায়, বাজারোত পাওয়া যায় ইলিফের চাউলের খালি বস্তা,
মোক কনতো দেখোং, এইল্লা বেঁচায় কায়, আর কেনেটা কায়,
কবার পান?
একান মাটি কাটার কাট চাচুনু মেম্বারবেটে, তিরিশ হাজার টাকা চায় ওমার চামচালা এখান কাটের জন্যে।
গরীব মানুষ না খেয়া মরে আর নামে বেনামে কাট খায় মেম্বারের ঘরের ভাই ভাগার।


প্যাটের ভোগ সবার না পেয়া মাস খানেক আগো আচ্ছুং তোমার শহর অংপুরোত।
মেলা কষ্টে একান ইসকা জোগার কচ্ছুং কয়দিন আগোত।
আর তাতে তো শুরু হইল গন্ডোগোল।
বাড়ির বাইরাত বোলে যাওয়ায় নিষেধ।
ওই যে করোনা না কি দোকোন আইচ্ছে তারে বাদে।
আল্লাহ বোধায় মোর সতে সতে করোনাকো প্যাটে দিছে শহরোত।
দুইদিন বসি থাকিয়া প্যাটের ভোকে কাইল বেড়াছুনু ইস্কা খান ধরি।
ও মা ও, ওই মোড়ের কাইন্টাত আইসতে তিন চার ঝনে মোক ধরিয়া কিযে কইল্লে মা ও।
একঝন তো লোহার সিক দয়া ঘুতিয়া ঘুতিয়া মোর ইস্কার চাকালা তামানে ফাটে দিলে।
আর মোর ছওয়ার বয়সে বয়স, ওমায় মোক কান ধরি উঠা বসা করাইলে কতক্ষণ।
আর একজন তো দৌড়ি আসিয়া একান মাকলা বাঁশের ফালাটি দিয়া পিটি খানোত সাপাত সাপাত করিয়া দিলে কয়টা ডাং নাগে।
মিছা কতা না কং মাও,
এই দেখো তো পিটি খান ফাটিয়া কেমন হইছে?
ওমা বোলে আইনেও লোক।
মোক গাইলায় আর কয়, জানোনা দ্যাশোত লক ডাউন চইলতেছে।
তা তোমরায় কও তো মা,  প্যাট কি লক ডাউন বোঝে?
প্যাট কি বোঝে করোনা আর মহামারী?
সারাদিন ইস্কা চলেয়া রাইতোর থাকছুনু মসজিদের বারান্দাত।
এলা তো সেটাও বন্ধ,
মাথার উপরোত খোলা আসমান খান ছাড়া মোর তো আর কিচ্ছুই থাকিল না।
আইজ দুইদিন থাকি পেটোত কোন দানা-পানি নাই।
গাও খানোত শ্যামশ্যামা জ্বর।
এই অচেনা শহরোত কায় মোক চেনে যে, দুই মুঠ ভাত খোয়াইবে কন তো?
করোনাত মরির আগোত মোক বোধায় না খেয়া মরির নাইগবে।
তা মরির আগোত বিচার দিনু ওই আল্লাহর দরবারোত,
হে বারে আল্লাহ...
যায় গরীব মাইনষের মুখের আহার কারি নিয়া খায়, তোমরা তার বিচার করেন।
মোর মোতন অসহায়ের উপর যায় জুলুম আর অত্যাচার করে, তোমারা তার বিচার করেন......
দুনিয়া ও আখেরাতোত তোমরা ছাড়া হামার দুঃখ-কষ্ট দেখার তো আর কাহো নাই....
আর কাহো নাই....