কবিবর সহিদুল হক মহাশয়ের 'মেঘের মতন ভেসে আছি' কবিতা নিয়ে আমার অভিব্যক্তি


জাহিদ হোসেন রনজু


কবিতাটি যেন আমারই কথা, আমারই জীবন।
মধ্যবিত্ত জীবনের সামগ্রিক চিত্র।
অল্প পরিসরে কী চমৎকারভাবে কবি তাঁর 'মেঘের মতন ভেসে আছি' কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
কবিতার নামই বলে দেয় মধ্যবিত্ত অবস্থাটা কেমন।
মেঘের মতন ভেসে আছি - যার নেই কোন স্থায়ী ঠিকানা। শুন্যতার মাঝে সময়ের স্রোতে বেঁচে থাকা।
কবির ভাষায়-


'মেঘের মতন ভেসে আছি পথ বলে দেয় হাওয়া!
যাওয়ার ইচ্ছে যেমনই থাক, ব্যর্থ সে সব চাওয়া।'


সত্যিই তো তাই-
জীবনের নিয়মে চলে যায় জীবন। এতে আমার তেমন কিছু করার নেই। আমি কেমন চলবো সেটাও নির্ণীত হয় সামাজিক অবস্থার দ্বারা। সেখানে আমার ইচ্ছেগুলোর কোন মূল্য নেই যেন। আবার আমার ইচ্ছেগুলোকে পাওয়ার জন্য আমার যে ইচ্ছে শক্তির প্রয়োজন সেটাও আমার নেই।  যেভাবে চলছে সেভাবেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সেই কথাটিও কবি কী চমৎকারভাবে বলেছেন-


'দোষ কি তবে হাওয়ার কেবল? যায় না সেটা বলা।
আসল কথা অভ্যাসটাই জড়িয়ে আছে গলা।'


মধ্যবিত্তের নিজের সাথে নিজেরই যে দ্বান্দ্বিকতা রয়েছে সেটাও ফুটে উঠেছে কবিতার পরবর্তী দুটি চরণে অত্যন্ত সুন্দরভাবে-


'তবুও মানি বেশ তো আছি; আকাশ-আলো মাখি,
সকাল বিকেল গান গেয়ে যায় হরেক রকম পাখি।'


মধ্যবিত্তের সেই চিরাচরিত বোধ- 'বেশ তো আছি। চলছে।' যা  আছে সেটুকুও যেন না হারিয়ে যায়- আবার সেই ভয়ও কাজ করে সর্বদা। আর মধ্যবিত্তের সেই ভয়টাও চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে কবির সুনিপুণ লিখুনিতে-


'কিন্তু যখন ঝরতে দেখি কাছের দূরের মেঘ,
বুকের ভেতর অজানা ঝড় বাড়ায় ভীষণ বেগ।'


কী অসাধারণ উপমায় কবি তুলে আনলেন মধ্যবিত্তের মনের গভীরের লুকিয়ে থাকা এই সংশয় ও ভয়কে।


সবশেষে কবি মধ্যবিত্তের মনস্তাত্ত্বিক সান্ত্বনা পাওয়ার  বিষয়টিও তুলে এনেছেন অনুপমভাবে কবিতার শেষ স্তবকে-


'চেনা পাখি,চেনা আলোর  সময় বুঝে আসা-
অভ্যাস কি শুধুই ফিকে? সেও তো ভালবাসা।
বাষ্প তবু জমছে ধীরে, পদ্মপাতা আকাশ-
বদলে যাবে চেনা বাসা, মাটির সাথে বাস।'


যেটুকু আছে তার প্রতি মধ্যবিত্তের  সন্ত্তুষ্টিটুকু রেখে 'এই জীবন অনিত্য, ক্ষণস্থায়ী' - এই চিরন্তন অমোঘ সত্যের কাছে মধ্যবিত্তের সীমাবদ্ধতাটুকুকে সমর্পণ করে মানসিক তৃপ্তি লাভের কথাটিও কবি বলে গেলেন চমৎকারভাবে।


আমি অভিভূত। তাই আমি আমার কবিতার আলোচনা করার ন্যুনতম যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও লিখে গেলাম।  কবিবর সহিদুল হক মহাশয় বরাবরই শক্তিমান শুদ্ধতম লেখক এবং আমার যে কয়জন পরম শ্রদ্ধেয় লেখক আছেন তাঁদের একজন। তাঁর লেখার আলোচনা করা ষোগ্যতা আমার নেই। তাই আমার এই লেখাটিকে ধৃষ্টতা হিসাবে না দেখে  এটা আমার মনের অভিব্যক্তি বলে ধরে নিলেই আমি তৃপ্ত হবো।


কবির প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।