সেদিন খুব ইচ্ছে হয়েছিল তুরাগের জলে
আমার ঘরের জানালা দরজার পর্দা, থাল বাটি বাসন সব কিছু
এক যুগ ধরে রেখে দেয়া খাটের নীচে
তোমার পায়ের ধুলো, মাথার কিছু এলোমেলো চুল
আলমারিতে তোমার শেষ ভাজে রাখা শাড়ি
ড্রয়ারে রাখা এটা ওটা খুঁটিনাটি, হাবিজাবি...


দেয়ালে টাঙানো ফটো, সাত বছর আগের ক্যালেন্ডার
পুরোনো সালের ডায়েরি ও খবরের কাগজ, জং ধরা ছুরি
আয়নায় লেগে থাকা টিপ, বাকশে রাখা পুরোনো জুতো
এসব কিছু অঞ্জলি দিয়ে আসি...


মরা তেলাপোকা, অনড় আরো কিছু ফুল মাকড়শা
মাঝে মাঝে বাতাসে খানিক এপাশ ওপাশ
শুষ্ক অমসৃণ গোটানো কমলাপেঁড়ে শীতল-পাটি
দমবন্ধ আলমারির পেছনে ঠাঁই দাড়িয়ে
কি এক তোমার সুবাস এই ঘরখানায় ম' ম' করে
শানের মেঝেতে তোমার নুপুরের ক্ষীণ আওয়াজ...


জানালা দিয়ে বাইরে থেকে বাতাস আসে
এখানে ওখানে খানিক উড়ে উড়ে অদৃশ্য কোলাজ করে
কিছু কথোপকথন না হতেই মেঝেতে
সেই পরিযায়ী বাতাসের ঝাঁলর ভেঙে পড়ে...


পোরসেলিনের সাদা কাপে চা পাতার খয়েরি মানচিত্র
থেকে থেকে আরো অমোচনীয় হয়ে ওঠে
মসুর মুগের কাঁচ বয়ামে কিছু অত্যানুবীক্ষণিক  কীট
আমার ভ্রু কুঁচকে দেয়
খেয়ে ফ্যাল, তোরা আমাকেও খেয়ে ফ্যাল...


আবারও সব কিছু ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়
রাগ হয় কিন্তু কি এক মায়ায় বুকের কোথায় চিন চিন করে ওঠে
রান্নাঘরের কৌটা-কুটি, টেবিলের জগটা, গ্লাসটা ও চায়ের কাপটা
তোমার হঠাৎ অনুপস্থিতি তীব্র না করে
আমার কাজে আসবে বলে কেমন প্রস্তুত দাড়িয়ে থাকে...


প্রায়শই শিলপাটায় মশলা বাটি, শব্দটা তোমাকে মনে করিয়ে দেয়
চুলায় তরকারি নেড়ে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খুন্তিটা কড়াইয়ের পাড়ে ঠন ঠন করি
এ শব্দটাও তোমাকে মনে করিয়ে দেয়
তোমার আইসক্রিমের বাকশোতে সুতোর কাটিমে সূঁচ তেমনি লাগিয়ে রাখি
অসতর্কে হাতাহাতি করলে রক্তারক্তি হবে জেনেও...


সবকিছুই কিছু না কিছু কথা বলে, এভাবে না ওভাবে করো
মশারির কোনা, দরজার হাতল অথবা চাবির ছড়া
শুধু ইজি চেয়ারটা আমাকে বলে, একটু এসে হেলান দিয়ে বসো
তুমি মেঘের উপর মেঘ হয়ে একরকম ভালোই আছো...