আমি সেলুলর জেল থেকে বলছি
নাম ! আপনারা মনের মতন ভেবে নিন।
ঠিকানা ! আপনাদের আসে পাশেই কোথাও হবে।
স্বাধীনতা চেয়েছিলাম বলে কালাপানি হয়ে গেল।
বাবা মা কেউ জানতনা, যে আমি স্বাধীনতাকামী।
শুধু জানত বোন দামিনী আর ওর বান্ধবী অপর্ণা ।


বোন আমার গর্বে গরবিনী,
আর অপর্ণা ছিল একটু অন্যরকম ;
ও যেন দেখেও দেখেনি ঠিক দুরদ্বিপ্রবাসিনি
গোপনে চলত সভাসমিতি,আর খবর লেনদেন;
লাঠিখেলা পারতাম না, একটা ভীতি কাজ করতো;
একদিন অসাবধানে কপাল ফেটে বসে পরেছিলাম।
তবে বন্দুক চালানো শিখে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি;
অর্জুনদা হেসে বললে তুই পারবি রে তুই পারবি...।
একদিন ধরা পরে গেলাম বামালসমেত...
পেটের কথা পেটে রাখতে অকথ্য অত্যাচার সহ্য করলাম।
তারপর, চালান হয়ে গেলাম আরও অনেকের সাথে;
অচেতন অবস্থায় মুখ ভেসে ওঠে আপনজনের
কথা হয় মনে মনে, ওরা চোখের জল ফেলে।
আমার বোনের চোখে ঝরতে দেখেছি আগুন।।
আর অপর্ণা! নাহ ওকে দেখিনি কখনও; শুধু একদিন
শুধু একদিন ঝড়ের রাতে মনে হল
ও আমাকে ডেকে ডেকে ফিরছে, কালাপানির ঢেউয়ে।
আমার হাতের বেড়ি পায়ের শিকল সব খুলে গেল।
ঝড়ের দাপট ভেঙে ছুটে গেলাম সমুদ্র সৈকতে ।।
একবার ও চেয়েছিল অভিমানী দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে।
তারপর হারিয়ে গেল ! আর দেখতে পেলাম না।


ধরা পড়ে গেলাম ।
কাল ভোরের মুখ আমাকে ওরা দেখতে দেবে না।
কাছেপিঠে বড় পিতলের ঘণ্টা বেজে উঠল ঢং ঢং ঢং
এবার ওরা নিতে আসবে । আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
গোলোকচাঁপা ফুলের গন্ধে ক্রমশ আমি আবেশিত;
এখন মনে হচ্চে শৃঙ্খলিতা মাতা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
শরীরে যত যন্ত্রণা সব যেন কোথায় মিলিয়ে গেল।


* ওরা আমার মৃত শরীর নিয়ে অনেক রাজনীতি করল।