কাল রাতের বৃষ্টিতে মাঠ ভরে গেছে একটু জলে,
মুড়ি ওয়ালি দিদি আজো ডাক দিয়েছিলো সকালে।
"ও দিদি, শাক নিবি ?" কদিন থেকে দেখি যায় ডেকে,
"মুড়ি লাগবে নাকি গে?" কথাটা বলে সে বেশ হেঁকে।
আমি শুনে পাশ ফিরে শুই, মুখ বুজে চুপ করে রই।মুড়ি পাওয়া যায় দোকানেই, সহজে কি শেষ হয় !
ও জেনে গেছে টাটকা শাক আমি কত্তো ভালোবাসি,
অবশ্য কথাটা বলতে নেই, খাই, অনেকটা যেন ছাই !
"নেবো তো", উত্তর দিই আমি,শাকের কথা শুনে তাই।
লাফিয়ে বিছানা ছাড়ি, চাবি নিয়ে প্রায় দৌড়ে যাই,
তালা খুলে ওকে আদর করে ডেকে, বাড়ি ঢোকাই।
"শাক ও মুড়ি দুটোই নেবো, কি শাক এনেছো ভাই ?"
"খারকন আছে, পাট শাক আছে, গিমা তিতা আছে,"
পাটশাক মিষ্টি না তেতো, একথা জিজ্ঞেস করায়,
"মিষ্টি" বলে ছোট্টো করে একটু হেসে উত্তরটা দেয়।
এক দিনে আর কত রকম শাক মানুষে খায় !
দিদার ভাষায় "খারমান" দুই আঁটি, আর গিমা নিই,
সাথে ওর"ঘরে নিজের হাতে ভাজা মুড়ি"তো আছেই।
মালতীদিদি বা পুঁথি বাটতো পাতা আগে ভেজে নিয়ে,
খটোমটো ঝামেলাদার আর হাত কুটকুট করে বলে,
বাড়ি মাথায় করতো ওরা লাফিয়ে আর  ঝাঁপিয়ে।
দিদার কিংবা মায়ের কথা কি করে ওরা ফেলে !
"কাটতে, ধুতে, বাটতে পারবোনা", কি করে বলে ?
মনে আছে, তাই সহজে কি আর সে ঝামেলায় যাই !
তবু মাঝে মাঝেই নাকে যেন সেই খাদ্যের সুবাস পাই।
একটু একটু লোভ,শখ হয়, তাই একবার কিনে রাখি,
সাহসে ভর করে, নিজে বুদ্ধি করে, কাঁচা বাটতে যাই,
আহা ! ভুলিনি, চোখের জলে ভাসে আমার আঁখি।
তারপর কুলিক নদী দিয়ে বয়ে গেছে জল প্রতি বছর,
খারমান,খারকন, খারকোল, ঘাটকোল কোন নামের,
অনুপ্রবেশ ঘটেনি,চৌকাঠ পেরোয়নি ওরা রান্নাঘরের,
শুধু পছন্দের ফ্লেভারটা হয়তো করেছে মনে ঘুরঘুর।
ইউটিউবে রেসিপি দেখে মেশাই একটু রস লেবুর ,
কাটার আগে হাতে লেবুর রস মেখে নিই এইবার।
রান্না টা হয়েছে ঠিকঠাক, খেতে মোটেও মন্দ নয়,
কিন্তু আমি খুঁজি,সেই গন্ধটা কেন নেই,গেল কোথায়!